
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে দৃশ্যপটে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন তাদের মূল দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের দিকে। দলটির নেতারা বলছেন, ঘোষিত ৩০ কর্মদিবসের সময়সীমার মধ্যেই এই ঘোষণাপত্র কার্যকর করা তাদের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের শর্ত পূরণেও জোর দিয়েছে নবগঠিত এ দলটি।
গণ–অভ্যুত্থানের দাবিতে আন্দোলনের সূচনায় ভূমিকা রাখা এনসিপি শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবি বাস্তবায়িত হওয়ার পর এবার তারা মনোযোগ দিয়েছে মৌলিক সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের মতো বিষয়ে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গণমাধ্যমকে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার যে এক মাস সময়সীমা দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যেই যেন জুলাই ঘোষণাপত্র জারি হয়, সেটাই এখন আমাদের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য।” তিনি জানান, গণপরিষদ নির্বাচন ও মৌলিক সংস্কার এনসিপির দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে রয়ে গেছে।
রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সংগঠন বিস্তারে নেমেছে এনসিপি। সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, দেশব্যাপী সংগঠনকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে সাংগঠকেরা অনানুষ্ঠানিক সফর শুরু করেছেন। খুব শিগগিরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। এর মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করে নিবন্ধনের শর্ত পূরণের প্রয়োজনীয় কাঠামো গড়ে তোলা হবে।
ইতোমধ্যেই দলের যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ আত্মপ্রকাশ করেছে। তৈরি করা হয়েছে শৃঙ্খলা কমিটি, রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটি এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের খসড়াও। আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে ‘জাতীয় নারী শক্তি’ ও ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’। বর্তমানে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঢাকার বাংলামোটরের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে; স্থায়ী কার্যালয়ের জন্যও খোঁজ চলছে।
নিবন্ধন নিশ্চিত করতে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে আলাদা দুটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের মুখ হাসনাত আবদুল্লাহ, আর উত্তরাঞ্চলে আছেন সারজিস আলম। ৩০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ২২টি জেলা ও ১০০টি উপজেলায় দলীয় কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
আড়াই মাস আগে আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি এখন স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক মাঠে সংগঠিত হতে চাইছে। তাই দলটি বড় কোনো কর্মসূচির ঘোষণা না দিলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে বদ্ধপরিকর। নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলে এনসিপি হবে দেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।