ঢাকা   সোমবার ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

যুবসমাজকে আদর্শ বিশ্ব গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

যুবসমাজকে আদর্শ বিশ্ব গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে বিশ্বের তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যেই সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনার শক্তি নিহিত রয়েছে।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সুইডেন ও নরওয়ের তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, অনেকে বলে তরুণরাই ভবিষ্যৎ, কিন্তু আমি বলি তরুণরাই বর্তমান। পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে, আর আজকের তরুণরা আগের প্রজন্মের মতো নয়। প্রযুক্তি ও পরিবেশ আপনাদের এক অনন্য মানবিক শক্তিতে পরিণত করেছে। আপনাদের শুধু নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে- আমি কেমন বিশ্ব গড়তে চাই? তারপর সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন, কারণ আপনাদের হাতে সেই পরিবর্তনের উপকরণ রয়েছে।

সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইক্স এবং নরওয়ের হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুইডেনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতারা- অ্যালিস ল্যান্ডারহল্ম (মডারেট ইউথ পার্টি), অ্যারিয়ান তওয়ানা (সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক ইউথ পার্টি), অ্যান্টন হোমলুন্ড (লিবারেল ইউথ পার্টি), ডেক্সটার ক্রোকস্টেড (সুইডেন ডেমোক্র্যাটস ইউথ), হান্না লিন্ডকভিস্ট (গ্রিন ইউথ পার্টি) এবং ম্যাক্স পেলিন (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউথ পার্টি)। নরওয়ে থেকে অংশ নেন ওডা রোহমে সিভার্টসেন (ইয়াং কনজারভেটিভস), লার্স মিকায়েল বারস্টাড লভোল্ড (প্রগ্রেস পার্টি ইউথ) এবং সিভার ক্লেভে কোলস্টাড (রেড ইউথ)।

তাদের সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, নর্ডিক রিপ্রেজেন্টেশন অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর ক্যারোলিন অ্যাবার্গ, স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনস বিশেষজ্ঞ কীর্তিজয় পাহাড়ি এবং যোগাযোগ বিশ্লেষক এমিলি আন্দ্রেসেন।

সাক্ষাতে তরুণ রাজনীতিকেরা নিজেদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও ভাবনা তুলে ধরেন এবং জুলাই অভ্যুত্থান, তরুণদের ভূমিকা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে তার মতামত প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান।

ড. ইউনূস বলেন, জুলাই ছিল ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত, বিশেষ করে কারণ অসংখ্য তরুণী তখন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। আপনারা এমন এক সময় বাংলাদেশে এসেছেন যখন দেশটি গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি, আপনারা আমাদের তরুণদের সঙ্গে সময় কাটাবেন, তাদের স্বপ্ন ও আশা সম্পর্কে জানবেন।

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের বিপ্লবীরা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি তুলেছিল, বিশেষত সংবিধান সংস্কার, যেটিকে তারা স্বৈরশাসনের মূল কারণ হিসেবে দেখেছিল। আমরা একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠনের জন্য ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হয়। মাসের পর মাস ৩০টিরও বেশি দল বিতর্কে অংশ নেয়। অবশেষে সবাই একমত হয় এবং আমরা এই মাসেই ‘জুলাই চার্টার’ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি আমাদের জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে। এমন প্রক্রিয়া অন্য কোনো দেশে হয়েছে বলে আমি জানি না।

প্রধান উপদেষ্টা সফররত তরুণ নেতাদের বাংলাদেশ ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দেশের প্রতিটি রাস্তাই একটি গল্প বলে। দেয়ালের লেখাগুলো, দেয়ালচিত্রগুলো, আপনি যেগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটছেন- সেগুলোই তরুণদের প্রতিরোধ আর স্বপ্নের জীবন্ত জাদুঘর।

আলোচনায় অধ্যাপক ইউনুসের ‘থ্রি জিরোস’ ধারণা ও ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বা সামাজিক ব্যবসার ধারণাও উঠে আসে। ‘থ্রি জিরোস’ ধারণায় তিনি এমন এক নতুন সভ্যতার কথা বলেন যেখানে থাকবে শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদকেন্দ্রীকরণ (যেন দারিদ্র্য দূর হয়) এবং শূন্য বেকারত্ব (উদ্যোক্তা মনোভাব জাগিয়ে তুলে)।