
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে রাতের মধ্যেই শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিন্তু পরদিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেল তার উল্টো চিত্র—অবহেলায় পড়ে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত পশুর বর্জ্যে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নাগরিকদের সকাল।
উত্তর সিটির আশ্বাস বনাম বাস্তবতা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন আগারগাঁও এলাকার পরিসংখ্যান সড়ক সংলগ্ন অঞ্চল থেকে শুরু করে মধ্য পীরেরবাগ, পশ্চিম আগারগাঁও, মধ্যমণিপুর ও শেওড়াপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় রোববার সকালেই দেখা গেছে পচতে থাকা বর্জ্যের স্তূপ। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলের পর আর কোনো বর্জ্যবাহী গাড়ি ওই এলাকায় আসেনি। ফলে অলিগলি ও কনটেইনারে জমা বর্জ্য পড়ে ছিল আগের অবস্থাতেই।
সিটি করপোরেশনের দাবি
ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে জানায়, ঈদের দিনের কোরবানির ৯,৫০০ টন বর্জ্য ৮.৫ ঘণ্টায় অপসারণ করা হয়েছে, যাতে অংশ নিয়েছে ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিন্তু বাস্তবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটেও মিরপুর ৬০ ফুট সড়ক, প্যারিস রোড মার্কেট ও বেনারসিপল্লি এলাকায় সেই বর্জ্য দেখা যায় জমে থাকতে।
দক্ষিণ সিটির দৃশ্যও মিলছে উত্তর সঙ্গে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) দাবি করেছিল, ৭৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার টনেরও বেশি বর্জ্য রাত ৯টা ৩০ মিনিটের আগেই অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোড, কলাবাগান শিশুপার্ক–সংলগ্ন এসটিএস, আবাহনী মাঠ এবং হাজারীবাগের মনেশ্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, বর্জ্য এখনো পড়ে আছে স্তূপাকারে।
অব্যবস্থাপনার প্রমাণ এসটিএস কেন্দ্রেই
যেখানে দক্ষিণ সিটির কোরবানির বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল—কলাবাগান শিশুপার্ক–সংলগ্ন এসটিএস—সেখানেও রোববার সকাল ৮টার দিকে দেখা গেছে, এসটিএসের এক-চতুর্থাংশজুড়ে বর্জ্য জমে রয়েছে। উপস্থিত কেউ বলেন, রাত তিনটা পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করলেও সকালে কেউ কাজে ফেরেননি।
নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে দুর্গন্ধ ও যানজট
বর্জ্যের কারণে অনেক স্থানে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। যেমন, মধ্যমণিপুর এলাকার বারেক মোল্লা মোড়ে এক লেনে চলতে বাধ্য হয়েছে যানবাহন। গরুর উচ্ছিষ্ট অংশ ও পচা ভুঁড়ির গন্ধে হাঁটতে পর্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন পথচারীরা। আজিমপুর গোরস্তান সংলগ্ন এলাকাও একইভাবে দুর্গন্ধময় বর্জ্যে ছেয়ে আছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা কাগজে-কলমে সফল হলেও, বাস্তব চিত্র ভিন্ন কথা বলছে। সরেজমিন পরিদর্শনে ধরা পড়েছে সুষ্ঠু সমন্বয় ও সম্পূর্ণতা-নির্ভর অপসারণ ব্যবস্থার অভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়, নজরদারি ও বাস্তবায়নেই রয়েছে পরিবেশবান্ধব শহর ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি।