
বর্তমান সময়ে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ফলে অল্প বয়সেই শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ। নেপথ্যে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কয়েক বছর আগেও অল্পবয়সিদের মধ্যে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যেত না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কমবয়সিদের মধ্যেও কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তার উদ্রেক দেখা দিচ্ছে।
শরীরে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে রক্তে ভাসতে থাকা চটচটে পদার্থগুলো একটা সময়ে ধমনীর গায়ে আটকে যায়। ফলে শরীরে রক্ত চলাচল করতে বাধা পাওয়ায় নানা সমস্যা শুরু হয়। সঠিক সময়ে সেসব সংকেত বুঝলেই সাবধান হওয়া যায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা নীরবে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা ডেকে আনতে পারে।
তাই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে কোলেস্টেরলের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত। যার জন্য নির্দিষ্ট বয়সে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
কারা কখন পরীক্ষা করবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত যাদের কোনো বিশেষ স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই, তাদের ২০ বছর বয়সে প্রথম ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করানো উচিত।পরীক্ষার রিপোর্ট যদি স্বাভাবিক আসে, তবে ৪ থেকে ৬ বছর পর পর এই পরীক্ষা করা যথেষ্ট। তবে যাদের পরিবারে অল্প বয়সে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে। এমন ক্ষেত্রে ২০ বছরের আগেই পরীক্ষা শুরু করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতি ১–২ বছর অন্তর অন্তর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো জরুরি।
শিশুদের ক্ষেত্রেও নজরদারি জরুরি
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিশুদের ক্ষেত্রেও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ। ঝুঁকি না থাকলে প্রথম পরীক্ষা করা উচিত ৯–১১ বছর বয়সে।
পরবর্তী পরীক্ষা ১৭–২১ বছর বয়সে করতে পারলে ভালো। আর যদি পরিবারের সদস্যদের হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের ইতিহাস থাকে, একইসঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন কিংবা ওজন বেশি থাকে অথবা পিসিওএস থাকে, তাহলে যত দ্রুত কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাবেন ততই ঝুঁকি এড়াতে পারবেন।
শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি লক্ষণ, যেমন অল্প হাঁটলেই পায়ের যন্ত্রণা, মাঝে মাঝে পা অবশ হয়ে যাওয়া, চোখের চারপাশে ছোট ছোট মাংসপিণ্ড জমা, জিভের ওপর ছোট ছোট ফুসকুড়ি, জিভের রং বদলে যাওয়া, মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া, বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা, হাঁটতে গেলে হাঁফ লাগা, সিঁড়ি চড়তে সমস্যা, নখের জেল্লা হারিয়ে যাওয়া, নখ হলদেটে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা লক্ষ্য করলে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে,কোলেস্টেরল মাত্রাতিরিক্ত হলে তা ধীরে ধীরে ধমনীর ভেতরে প্লাক জমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় কোনো উপসর্গ না থাকলেও বিপদ ঘনিয়ে আসে। তাই সময় মতো পরীক্ষা করলে সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা সম্ভব। একইসঙ্গে সুষম খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল চাবিকাঠি।
সূত্র : আজকাল