
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মানসিকভাবে পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিকট শব্দ, আতঙ্কে ছোটাছুটি, কান্না আর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ দৃশ্য—এসব শিশুদের মনে এক গভীর মানসিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার পরপরই যেটা ঘটে, সেটিকে বলে অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন বা এএসআর। এটি দুর্বলতা নয়; বরং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া। এমন দুর্ঘটনায় অনেকে স্তব্ধ হয়ে যায়, কেউ অস্বাভাবিক চুপচাপ হয়ে পড়ে, কেউবা বারবার আতঙ্কে কেঁদে ফেলে। ঘুম না হওয়া, দুঃস্বপ্ন দেখা, রুচি কমে যাওয়া কিংবা আচরণে হঠাৎ রাগ বা ভয়—এসবই এই প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ।
যেসব লক্ষণ দেখা যায়
আতঙ্ক বা স্তব্ধতা।
হঠাৎ নীরব হয়ে যাওয়া।
কান্না বেড়ে যাওয়া বা ঘন ঘন কান্না।
ঘুমের সমস্যা ও দুঃস্বপ্ন দেখা।
স্কুলে যেতে অনীহা।
পেটব্যথা, মাথাব্যথা বা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
বারবার একই ঘটনা বলা বা আঁকা।
আচরণে রাগ, বিরক্তি বা অতিরিক্ত ভীতি।
মা–বাবার সঙ্গে সব সময় লেগে থাকা।
এসব লক্ষণ যদি তিন–চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং দৈনন্দিন কাজে বাধা দেয়, তাহলে একে অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বলা হয়। আর যদি সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি না হয়; বরং মানসিক আঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে, তাহলে তা পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের দিকে রূপ নিতে পারে।
অভিভাবকদের করণীয়
শুনুন ও সময় দিন: শিশুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করুন—‘তুমি কেমন আছো?’, ‘তুমি কি ভয় পেয়েছিলে?’ শিশুদের বলার সুযোগ দিন, কথা বলতে দিন। তাদের থামিয়ে দেবেন না।
ভয়কে স্বীকার করুন: ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই’ না বলে বলুন, ‘আমি বুঝি তুমি ভয় পেয়েছ, আমিও ভয় পেয়েছিলাম।’
পর্যবেক্ষণ করুন আচরণগত পরিবর্তন: ঘুম, খাওয়া, আচরণ বা মনোযোগে পরিবর্তন লক্ষ করলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
স্কুলে মানসিক সহায়তা কেন্দ্র চালু করুন: এ ধরনের ঘটনায় স্কুলপর্যায়ে গ্রুপ থেরাপি, চিত্রাঙ্কন, গল্প বলা কিংবা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
আমরা সবাই চাই শিশুরা হাসবে, খেলবে, স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সেই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে, তারা এখন কেমন আছে। এটা শুধু চিকিৎসকের দায়িত্ব নয়; মা, বাবা, শিক্ষক, প্রতিবেশী—সবারই দায়িত্ব।