ঢাকা   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

প্রথম বেতন? আজই শুরু হোক সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অভ্যাস

জীবনযাপন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ২৪ জুন ২০২৫

সর্বশেষ

প্রথম বেতন? আজই শুরু হোক সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অভ্যাস

জীবনের প্রথম চাকরি, প্রথম বেতন পাওয়ার অনুভূতি নিশ্চয়ই অনন্য। জীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু করার সময় অনেকেই নিজের সুপ্ত ইচ্ছাগুলো পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ দামি গ্যাজেট বা অনুষঙ্গ কেনেন, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যান কিংবা পরিবারের সদস্যদের দেন দামি উপহার। এসব তো করবেনই। তবে পেশাজীবনের শুরু থেকেই লাগামহীন টাকা খরচের অভ্যাস কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর্থিকভাবে সচেতন হলে ভবিষ্যতের জন্য মজবুত ভিত গড়তে পারবেন আপনার প্রথম বেতন দিয়েই। আর এর জন্য প্রয়োজন বেতনের টাকা সঞ্চয় ও বিনিয়োগকৌশল নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা।

কেন বিনিয়োগ জরুরি
মূল্যস্ফীতির এই বাজারে টাকার মান প্রতিনিয়তই কমছে। টাকা যেন অলসভাবে ব্যাংকে পড়ে না থাকে; বরং তা যেন কাজে লাগে এবং ভালো মুনাফা দেয়, এ জন্যই বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বেতনের একটি অংশ থেকেই যদি বিনিয়োগের অভ্যাস তৈরি হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তা হবে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুরক্ষার ভিত্তি।

শুরুটা হোক বাজেট দিয়ে
প্রথম ধাপ হলো আপনার বেতনের ওপর ভিত্তি করে একটি বাজেট পরিকল্পনা করা। এ বাজেট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভাগ করুন, যা ৫০-৩০-২০—এ তিন ভাগে ভাগ করতে পারেন।

বেতনের ৫০ শতাংশ প্রয়োজনীয় খরচ: বাসাভাড়া, খাবার, যাতায়াত ইত্যাদি।

বেতনের ৩০ শতাংশ ব্যক্তিগত চাহিদা: ঘুরতে যাওয়া, কেনাকাটা, বিনোদন।

বেতনের ২০ শতাংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ: এ অংশই আপনার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থাৎ আপনার বেতন যদি ১০ হাজার টাকা হয়, প্রয়োজনীয় খরচ বাবদ রাখতে পারেন ৫ হাজার টাকা, ৩ হাজার দিয়ে মেটাতে পারেন ব্যক্তিগত চাহিদা। আর বাকি ২ হাজার রাখুন সঞ্চয় হিসেবে, যা পরবর্তী সময়ে সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ করবেন।

জরুরি তহবিল গড়ে তোলা
যেকোনো আর্থিক বিপর্যয়, যেমন হঠাৎ অসুস্থতা, চাকরি চলে যাওয়া কিংবা পরিবারের জরুরি প্রয়োজনে যাতে আপনি সমস্যায় না পড়েন বা ধারদেনার দিকে যেতে না হয়, তার জন্য তৈরি করুন একটি জরুরি তহবিল বা ইমার্জেন্সি ফান্ড। আপনার বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ এই তহবিলে রাখুন, যতক্ষণ না তিন-ছয় মাসের খরচের সমপরিমাণ জমে।

বিনিয়োগের কিছু সহজ মাধ্যম
অভিজ্ঞতা ছাড়া হুট করেই শেয়ারবাজার বা আরও জটিল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করাই উত্তম। তাই চাইলে নিচের খাতগুলোতে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন:

সঞ্চয়পত্র বা পেনশন স্কিম: এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা সম্ভব, নিরাপদও বটে। তাই শুরুতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেষ্টা করতে পারেন।

মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ: মিউচুয়াল ফান্ডে অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে মাসে মাসে বিনিয়োগ করা যায় এবং দীর্ঘ মেয়াদে এটিও ভালো লাভ দেয়।

ফিক্সড ডিপোজিট: কম ঝুঁকির মধ্যে স্থায়ী মুনাফা পেতে বেছে নিতে পারেন ফিক্সড ডিপোজিট।

অভ্যাস গড়ুন
কথায় বলে, মানুষ অভ্যাসের দাস। প্রথম দিকে আপনি হয়তো খুব বেশি পরিমাণে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করতে পারবেন না। এতে হতাশ হবেন না। কত টাকা জমাতে পারছেন, তাতে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে টানা কত দিন টাকা জমাতে পারছেন, তার ওপর মনোযোগী হোন। প্রতি মাসে নিয়মিত ৫০০ বা ১ হাজার টাকাও যদি আপনি সঞ্চয় করতে পারেন, তাতেও ধীরে ধীরে বড় অঙ্কের সঞ্চয় হবে। যা বিনিয়োগে নিয়ে আসবে অধিক মুনাফা।

মনে রাখবেন, পেশাজীবনের শুরুর বেতনের প্রতিটি টাকাই আপনার ভবিষ্যতের ভিত গড়ার উপাদান। আনন্দ ও ইচ্ছেমতো খরচের পাশাপাশি যদি একটু সচেতন হয়ে পরিকল্পিতভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ শুরু করেন, তাহলে আর্থিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করা সময়ের ব্যাপারমাত্র। তাই অপচয় নয়, আপনার প্রথম বেতন দিয়েই শুরু করুন সঞ্চয় ও বিনিয়োগ; যা পারবে আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে।

সূত্র: ফাই ডট মানি

সর্বশেষ