‘লিচুর বাগানে’ গান নিয়ে তোলপাড়, মৃত্যুর ১১ বছর পর আলোচনায় ভাটির লোকশিল্পী ছত্তার পাগলা

‘লিচুর বাগানে’ গান ঘিরে ঈদের আগেই শুরু হয়েছে সারা দেশের তুমুল আলোচনা। গানটি ব্যবহৃত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমা ‘তাণ্ডব’-এ। গানটি প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে—কে এই ছত্তার পাগলা?

নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চলের সংগীতশিল্পী ছত্তার তালুকদারের নাম সামনে আসে, যিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘ছত্তার পাগলা’ হিসেবে। জীবদ্দশায় তিনি ট্রেনে, স্টেশনে, হাটবাজারে গান গেয়ে বেড়াতেন। ঘেটু গানের দল থেকেই তাঁর সৃষ্টির সূচনা। ছত্তার পাগলার মৃত্যু হয়েছে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। মৃত্যুর ১১ বছর পর, এই একটি গান তাঁকে এনে দিয়েছে নতুন করে জাতীয় পরিচিতি।

কার লেখা ‘লিচুর বাগানে’?

গানটি নিয়ে শুরু হয়েছে কপিরাইট বিতর্ক। কবি ও গবেষক সরোজ মোস্তফার দাবি, গানটির গীতিকার ও সুরকার ছত্তার পাগলাই। তিনি জীবদ্দশায় গানটির পাণ্ডুলিপিও রেখে গেছেন। তবে সংগীত গবেষক গৌতম কে শুভর মতে, এটি মূলত পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঘেটু ঘরানার প্রচলিত গান, যার কিছু অংশ ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে বদলে জনপ্রিয় করেছেন।

ছত্তার পাগলার ঘনিষ্ঠজন মোহনগঞ্জের চিকিৎসক আল মামুন চৌধুরী জানান, ছত্তার পাগলার মুখ থেকে শুনে তিনি গানটি লিখে রেখেছিলেন তাঁর মৃত্যুর তিন বছর আগে। ছত্তার পাগলা বলতেন, “যত্নের লিচুর বাগান দুষ্টু ছাগলে খেতে আসে, তাই বাগানে বেড়া দিয়েছেন।” প্রতীকীভাবে প্রেমের গল্প ফুটিয়ে তোলাই ছিল গানটির উদ্দেশ্য।

কে ছিলেন ছত্তার পাগলা?

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লালচাপুর গ্রামে জন্ম ছত্তার পাগলার। পরে পরিবার নিয়ে চলে যান বারহাট্টা উপজেলার নুরুল্লাচর গ্রামে। সেখানেই কেটেছে তাঁর বাকি জীবন। গত শতকের ত্রিশের দশকে নেত্রকোনায় লেটো গানের দলে গান শুনে বড় হয়েছেন তিনি। পরে নিজেই গান লিখে সুর করতেন ও পরিবেশন করতেন। তাঁর লেখা জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে—
 ‘তওবা কইরা বল খেলাডা ছাড়’
 ‘কাঙ্গাল মাইরা জাঙ্গাল দিলে গোনাহ হইবো তোর’
 ‘ইঞ্জিন ছাড়া ঠেলাইয়া নেই খালি মালগাড়ি’

ছত্তার পাগলার লেখা ও মুখে গাওয়া এসব গান নিয়ে শিগগিরই একটি সংকলন বই প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।

নতুনভাবে ‘লিচুর বাগানে’

তাণ্ডব সিনেমার জন্য ‘লিচুর বাগানে’ গানটি নতুন করে তৈরি করেছেন প্রীতম হাসান, মেহেদী আনসারি ও ইনামুল তাহসিন। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম, জেফার, আলেয়া বেগম ও মঙ্গল মিয়া। মূল গানের কিছু অংশ নিয়ে নতুনভাবে রচনা ও সুর করেছেন প্রীতম।

পরিচালক রায়হান রাফী জানিয়েছেন, তাঁরা পুরোনো লোকগানকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। এই ভাবনা থেকেই ছত্তার পাগলার লেখা ‘লিচুর বাগানে’ গানটি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।

একটি গানই পাল্টে দিয়েছে ছত্তার পাগলার নাম ও মর্যাদা। মৃত্যুর এক যুগ পর, লোকগানের এই বাউল এবার শহরের মানুষের কণ্ঠেও বাজছে। ‘লিচুর বাগানে’ শুধু একটি গান নয়, এটি হয়ে উঠেছে ভাটি অঞ্চলের লোকশিল্পের পরিচয়চিহ্ন।