
জামালপুরের বকশীগঞ্জের একটি পাটখেত থেকে উদ্ধার হওয়া নারীর পোড়া লাশের পরিচয় উদ্ঘাটনে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছে পুলিশ। মুখমণ্ডলসহ শরীরের অংশবিশেষ পুড়ে যাওয়ায় সেদিন পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত মাথায় পুরোনো এক কাটা চিহ্নই গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে পরিণত হয়। সেই সূত্র ধরেই জানা যায়, নিহত নারীর নাম মোছা. নবিরন খাতুন (৫২)। তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চেংটিমারী পূর্ব এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন পোশাকশ্রমিক ছিলেন, থাকতেন ঢাকার খিলগাঁও এলাকায়।
এই নারীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর জামাতা আবু তালেব মণ্ডলকে (৪৭)। পুলিশ জানায়, ঢাকায় বসবাসকারী দুই সন্ত্রাসীকে ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া করে তালেব নিজেই খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পাটখেতে পাওয়া পোড়া লাশের মাথায় ছয় ইঞ্চি গভীর একটি কাটা চিহ্ন ছিল। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখও ছিল। কিন্তু আঙুলের ছাপ বা প্রযুক্তিগত উপায়ে পরিচয় মেলেনি। পরে স্থানীয় এক শিক্ষক পুলিশকে জানান, মে দিবসের দিন আবু তালেব তাঁর এক আত্মীয়ার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহ বাড়ে এবং তদন্তে বেরিয়ে আসে, নবিরন খাতুন এর আগে বকশীগঞ্জে এক ওষুধের দোকান থেকে চিকিৎসাও নিয়েছিলেন।
নিখোঁজ সংক্রান্ত অনুসন্ধানে পুলিশ নবিরনের মেয়ে বিলকিস বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর মায়ের সন্ধান পাচ্ছেন না এবং তাঁর স্বামী আবু তালেব আগে একবার নবিরনের মাথায় আঘাত করেছিলেন। তখন পুলিশ নিশ্চিত হয়, পোড়া লাশটি নবিরনেরই।
পুলিশ ঢাকার সাভার থেকে আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করে। তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানদের আমার শাশুড়ি ঢাকায় নিয়ে যান এবং আমার সংসার ভাঙার পেছনে তিনি প্রধান ভূমিকা রাখেন। তাই আমি পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন করি।’
তালেব জানান, ১৫ মে নবিরন ঢাকা থেকে জামালপুরে আসলে সন্ধ্যায় তিনি ভাড়া করা দুই সন্ত্রাসীসহ নবিরনকে রিকশাভ্যানে করে নির্জন স্থানে নিয়ে যান। পরে নবিরনের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় টাকা ও ব্যাগ। এরপর লাশ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হয়।
তদন্তে আরও জানা গেছে, হত্যার আগে নবিরনের ওপর শারীরিক নির্যাতনের আলামতও মিলেছে, এমনটিই দাবি পুলিশের। এখনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন বকশীগঞ্জ তদন্তকেন্দ্রের এসআই মো. রফিকুল ইসলাম।