
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূল প্লাবিত, বন্ধ নৌ যোগাযোগ, দুর্ভোগে মানুষ
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল—including নিঝুম দ্বীপ—প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি পাঁচ থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে দ্বীপের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এর মধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য—জোয়ারে প্লাবিত রাস্তায় অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি মায়া হরিণ। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের কৌতূহল আরও বাড়ে।
নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় এই দৃশ্য বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও করেন দ্বীপের এক বাসিন্দা। জানা গেছে, হরিণটি বন বিভাগের হেফাজতে থাকে এবং এটি স্থানীয় পর্যটকদের কাছেও পরিচিত। নিঝুম দ্বীপ বন বিট কর্মকর্তা মো. সোহাগ জানান, হরিণটি এমন পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পানি বেড়ে গেলে নিজে থেকেই উঁচু জায়গায় চলে যায়, আবার পানি কমলে নেমে আসে। তাই আলাদাভাবে নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন হয় না।
এদিকে, নিম্নচাপের কারণে শুধু নিঝুম দ্বীপ নয়, প্লাবিত হয়েছে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল। হাতিয়ার বাসিন্দা মো. জামসেদ জানান, দ্বীপের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র নামার বাজার ও বন্দরটিলা বাজার জোয়ারে তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে, ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দ্বীপবাসী।
সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে দেশের নৌ যোগাযোগ গত দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। চেয়ারম্যানঘাটে আটকে পড়েছেন শতাধিক যাত্রী। তাঁদের মধ্যে একজন মো. খায়ের উদ্দিন জানান, তিনি জেলা শহর থেকে ফিরে এসেও ঘাটে এসে দেখেন, কোনো ট্রলার বা স্পিডবোট ছাড়ছে না। এমনকি আগের দিন থেকেই সি-ট্রাক চলাচলও বন্ধ।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলা উদ্দিন জানিয়েছেন, দুপুর থেকে বাতাসের গতি বেড়েছে, থেমে থেমে বৃষ্টিও হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে দ্বীপের চর ঘাসিয়া ও মূল ভূখণ্ডের অনেক এলাকাও জোয়ারে তলিয়ে গেছে।
জেলার প্রধান শহর মাইজদীতেও টানা বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে পানি জমেছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির আশপাশ ও হাকিম কোয়ার্টার এলাকা। অনেক জায়গায় জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে এবং আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এক হরিণের নির্ভয়ে পানিতে ঘুরে বেড়ানো যেমন বিস্ময় জাগিয়েছে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—প্রকৃতি যখন রুষ্ট হয়, তখন মানুষ ও প্রাণী সবার জীবনেই নেমে আসে অনিশ্চয়তা।