বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে বড় সাফল্য পেয়েছে ব্যাংক এশিয়া। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ব্যাংকটির মোট আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯৭ শতাংশ বেশি। এই সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ব্যাংক এশিয়াই। মূলত ট্রেজারি বিল ও বন্ডে কৌশলী বিনিয়োগই এই সাফল্যের প্রধান চালিকাশক্তি।
ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যাংক এশিয়ার বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শক্তিশালী ট্রেজারি অপারেশন ও দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনার ফলে ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকটির নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৭০.৯ শতাংশ বেশি।
ব্যাংকটির পরিচালন দক্ষতাও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। কস্ট-টু-ইনকাম রেশিও ২০২৩ সালের ৪৫.৪ শতাংশ থেকে কমে ৩৭.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কম পরিচালন ব্যয়, স্থিতিশীল প্রভিশনিং এবং কর ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার ফলে মুনাফা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে এসব সূচক।
আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যাংক এশিয়া ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমানতের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৪ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ, যেখানে আমানতের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী দুই থেকে তিন বছরে এই অঙ্ক ২০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কাসা (CASA) রেশিও ৩৮.২ শতাংশে নেমে আসায় মেয়াদি আমানতের ওপর নির্ভরতা কিছুটা বেড়েছে, ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকটির ঋণ-আমানত অনুপাত (LDR) ৬৪.৮ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ৮৭ শতাংশের অনেক নিচে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যাংকটি ট্রেজারি বন্ড থেকে তহবিল সরিয়ে উচ্চ মুনাফার করপোরেট, এসএমই ও রিটেইল ঋণে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। আগামী তিন বছরে মোট ঋণের অন্তত ৫০ শতাংশ রিটেইল ও এসএমই খাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর হলো—ব্যাংক এশিয়ার মূলধন ভিত্তি এখনো বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকটির ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও প্রায় ১৫ শতাংশ। এই শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের কার্যক্রম অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ব্যাংকটির শাখা নেটওয়ার্ক ও গ্রাহকভিত্তি আরও বিস্তৃত হবে।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৪ শতাংশে, যার ফলে প্রভিশন সংরক্ষণের চাপ বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন বর্তমানে ঋণাত্মক (-১.০%) পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন ঋণ অবলোপন নীতির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে মুনাফা ও লভ্যাংশ আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
(সূত্র: ইবিএল সিকিউরিটিজ বিশ্লেষণ)
























