ঢাকা   শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২

১৬ মাসে আইপিও শূন্য, স্থবির শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

১৬ মাসে আইপিও শূন্য, স্থবির শেয়ারবাজার

দেশের শেয়ারবাজারে টানা ১৬ মাস ধরে কোনো নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তৈরি হয়েছে নজিরবিহীন স্থবিরতা। দীর্ঘ এই সময়ে একটি নতুন আইপিও আবেদনও জমা পড়েনি, যা গত দেড় দশকের মধ্যে বিরল ঘটনা। করোনা মহামারির সময়কাল বাদ দিলে এমন স্থবিরতা আগে দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে বাজার অন্তত দুই বছর পিছিয়ে পড়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ‘টেকনো ড্রাগস’ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছর আরও চারটি কোম্পানি—এনআরবি ব্যাংক, শিকদার ইন্স্যুরেন্স ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজসহ মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বাজারে আসে। এরপর থেকেই আইপিও কার্যক্রম কার্যত থমকে আছে। নতুন কোম্পানি না আসায় বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ কমে গেছে এবং লেনদেনের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয় এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে গত ৭ অক্টোবর একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যারা নতুন ‘পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ বিধিমালা–২০২৫’ প্রণয়নের কাজ করছে। ইতোমধ্যে এর জনমত যাচাই শেষ হয়েছে এবং শিগগিরই গেজেট প্রকাশের কথা রয়েছে। তবে এই আইনি সংস্কারের অপেক্ষায় অনেক কোম্পানি আইপিওতে আসা থেকে বিরত রয়েছে।

বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, নতুন বিধিমালা প্রণয়ন চললেও পুরোনো বিধিমালা অনুযায়ী আইপিওতে আসতে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু কোম্পানিগুলোর দুর্বল সুশাসন, রেস্ট্রিকটেড প্রাইস মডেল এবং আগের কমিশনের সময়ে অনুমোদিত কিছু আইপিওতে অনিয়ম পাওয়ায় সেগুলো বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত না হওয়াও বাজারের গতি থামিয়ে দিয়েছে।

ডিএসইর প্রধান নির্বাহী মাজেদা খাতুন বলেন, দেশের লাভজনক সরকারি কোম্পানির সংখ্যা কম এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নীতিগত জটিলতা থাকায় নতুন তালিকাভুক্তি ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বোর্ড অনুমোদন ও কর-সংক্রান্ত সুবিধার অভাবও বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

অন্যদিকে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম মন্তব্য করেন, একটি অরাজনৈতিক সরকারের আমলেও প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়া হতাশাজনক। তিনি বলেন, বাজার সচল করতে বিএসইসির আরও সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন ছিল।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৮৪টি কোম্পানির মধ্যে ১০২টি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে, যা মোট কোম্পানির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সাবেক দুই চেয়ারম্যানের আমলে অনুমোদিত কোম্পানির প্রায় ৩৫ শতাংশই এখন দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ভালো মানের কোম্পানির ঘাটতির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে এবং বাজারে মন্দাভাব আরও প্রকট হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।