ঢাকা   শনিবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২

ব্লুমবার্গ সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি

ইএসজি রেটিংয়ের এলিট ক্লাবে ঢুকল শেয়ারবাজারের ১৬ কোম্পানি

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

সর্বশেষ

ইএসজি রেটিংয়ের এলিট ক্লাবে ঢুকল শেয়ারবাজারের ১৬ কোম্পানি

এক দশক আগেও বাংলাদেশের করপোরেট খাতে টেকসই উন্নয়ন বা ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন) চর্চা ছিল সীমিত কিছু বহুজাতিক ও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের গুরুত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় কোম্পানিগুলোও দ্রুত এই ধারায় যুক্ত হচ্ছে। বিনিয়োগ তথ্য সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের সর্বশেষ সূচকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারভুক্ত মোট ১৬টি কোম্পানি এখন ইএসজি রেটিংপ্রাপ্ত এলিট তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

ব্লুমবার্গের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালে যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৭টি কোম্পানি এই তালিকায় ছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০টিতে। আর ২০২৫ সালে এসে এক লাফে ১৬টি কোম্পানি বৈশ্বিক এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নতুন করে তালিকায় যুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, হেইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস, রবি আজিয়াটা, সিটি ব্যাংক, আইডিসিএল ফাইন্যান্স, গ্রামীণফোন, বিএসআরএম, বিএটি বাংলাদেশ, এমজেএল বাংলাদেশ, ওয়ালটন হাই-টেক এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনেকের ইএসজি স্কোর আগের প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য স্পষ্ট এই সূচকে। ১০-এর মধ্যে ৬ দশমিক ১৬ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশ, যা বিশেষ করে পরিবেশগত মানদণ্ডে ৫ দশমিক ০৯ স্কোর অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ পেয়েছে ৬ দশমিক ১১ স্কোর, যেখানে সুশাসন মানদণ্ডে তাদের স্কোর সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৪৬। সামাজিক মানদণ্ডে ৮ দশমিক ৯২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। নতুন সংযোজন হেইডেলবার্গ মেটেরিয়ালস ৪ দশমিক ৮৪ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে।

আর্থিক ও টেলিযোগাযোগ খাতেও ইএসজি চর্চার উন্নতি চোখে পড়ছে। আর্থিক খাতে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, যা ৩ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে সামগ্রিক তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সিটি ব্যাংক ও আইডিসিএল ফাইন্যান্স উভয়েই ৩ দশমিক ২৮ স্কোর নিয়ে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। টেলিকম খাতে দীর্ঘদিনের ইএসজি নেতা গ্রামীণফোনকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছে রবি আজিয়াটা।

তবে উন্নতি সত্ত্বেও কিছু কোম্পানি এখনো তালিকার নিচের দিকে রয়েছে। ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম ২ দশমিক ২২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে অবস্থান করছে। অন্যদিকে বিএটি বাংলাদেশ, মারিকো বাংলাদেশ, এমজেএল বাংলাদেশ ও ওয়ালটন হাই-টেক আগের তুলনায় তাদের স্কোর উন্নত করলেও অবস্থান এখনো তুলনামূলকভাবে নিচে। দেশের অন্যতম বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস স্কোর বাড়িয়ে ১ দশমিক ২২ করলেও তালিকার তলানিতেই রয়েছে।

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি ইতিবাচক হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সংখ্যা এখনো কম। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, ভারতে ৬৮০টি, ইন্দোনেশিয়ায় ২০৫টি এবং পাকিস্তানে ৭৪টি ইএসজি রেটিংপ্রাপ্ত কোম্পানি রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের গ্রিন গার্মেন্টস শিল্প ও টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার অগ্রগতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে। ব্লুমবার্গের মতো বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে স্বচ্ছতা ও টেকসই কার্যক্রম নিয়মিত তুলে ধরা গেলে ভবিষ্যতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ আরও জোরদার হবে।

সর্বশেষ