বর্তমান ডিজিটাল জীবনে ফোন, ল্যাপটপ, স্মার্ট ওয়াচ কিংবা হেডফোন—সবকিছুর সঙ্গেই চার্জার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অনেকেই সুবিধার জন্য চার্জার সারাক্ষণ দেয়ালের সকেটে লাগিয়েই রাখেন। কিন্তু এই অভ্যাস যতটা নিরীহ মনে হয়, বাস্তবে ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চার্জার প্লাগে লাগানো থাকলে ডিভাইস সংযুক্ত না থাকলেও বিদ্যুৎ প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয় না। এতে একদিকে যেমন অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অপচয় হয়, অন্যদিকে চার্জার অতিরিক্ত গরম হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।
চার্জারের ভেতরে মূলত এমন একটি সার্কিট থাকে, যা দেয়াল থেকে আসা এসি (AC) বিদ্যুৎকে ডিসি (DC) বিদ্যুতে রূপান্তর করে। কারণ আমাদের মোবাইল বা ল্যাপটপের ব্যাটারি ডিসি বিদ্যুতেই কাজ করে। ফোন না লাগানো থাকলেও এই সার্কিটের কিছু অংশ সক্রিয় থাকে, ফলে বিদ্যুৎ খরচ চলতেই থাকে।
এই অদৃশ্য বিদ্যুৎ খরচকে বলা হয় ‘ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার’। একটি চার্জারের খরচ খুব কম মনে হলেও, ঘরে থাকা একাধিক চার্জার সারাক্ষণ প্লাগে থাকলে বছরে তা কয়েক কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ নষ্ট করতে পারে। শুধু চার্জার নয়, টিভি বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র বন্ধ থাকলেও একইভাবে বিদ্যুৎ টেনে নেয়।
সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো আগুন লাগার আশঙ্কা। পুরোনো, নিম্নমানের বা নকল চার্জার দীর্ঘ সময় প্লাগে থাকলে অতিরিক্ত গরম হয়ে শর্ট সার্কিটের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে সস্তা চার্জারের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেক বেশি। যদিও আধুনিক ভালো মানের চার্জারে স্মার্ট পাওয়ার সিস্টেম থাকে, যা ডিভাইস না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘স্লিপ মোডে’ চলে যায়।
তাই নিরাপদ থাকতে চার্জিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা জরুরি। ডিভাইস চার্জ হয়ে গেলে চার্জার খুলে ফেলুন, সারাদিন প্লাগে লাগিয়ে রাখার অভ্যাস পরিহার করুন। কোনো চার্জার অস্বাভাবিক গরম হলে, শব্দ করলে বা স্পার্ক দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করুন। সর্বোপরি, সবসময় মানসম্মত ও নিরাপদ চার্জার ব্যবহারে গুরুত্ব দিন।
চার্জার ছোট একটি যন্ত্র হলেও অসচেতন ব্যবহার থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও ঘরের নিরাপত্তার জন্য এখন থেকেই চার্জার ব্যবহারে সচেতন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
























