বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা–কক্সবাজারসহ দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। এবার সরাসরি টিকিটের মূল্য না বাড়িয়ে ‘পন্টেজ চার্জ’ বা অতিরিক্ত মাসুল আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, ফলে আসন ও রুটভেদে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ১৩ বছরে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে অন্তত পাঁচবার ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তে সরাসরি ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা না থাকলেও বাস্তবে যাত্রীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে।
নতুন পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে ঢাকা–চট্টগ্রাম, ঢাকা–কক্সবাজার, ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর ও ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ—এই ছয়টি রুটের মোট ১১টি সেতুতে। এসব সেতু পার হওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি নির্দিষ্ট হারে অতিরিক্ত মাসুল যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ২০১২ সালে ছিল ৫৮৫ টাকা। ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ৭২৫ টাকা এবং ২০২৪ সালে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পর ভাড়া দাঁড়ায় ৮৫৫ টাকায়। নতুন পন্টেজ চার্জ কার্যকরের পর এখন এই আসনের ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৯৪৩ টাকা।
ঢাকা–কক্সবাজার রুটেও ভাড়ার চাপ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ১ হাজার ৩২২ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ টাকায়। একই রুটে এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৪৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬৫৬ টাকা। এ রুটে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, রেলওয়ের রাজস্ব বাড়ানো এবং পরিচালন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে গত ২৫ মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের উপস্থিতিতে এক বিশেষ বৈঠকে ১৩টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম ছিল ১০০ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুগুলোতে পন্টেজ চার্জ আরোপ।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু রুটে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। এটি সরকারি সিদ্ধান্তের অংশ এবং পুরোনো সেতুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১২ সালে ট্রেনের ভাড়া একলাফে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ২০১৬ সালে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বাড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০২২ সালে নন-এসি প্রথম শ্রেণির টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয় এবং ২০২৪ সালে অতিরিক্ত বগির টিকিটে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়।
























