অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশের শেয়ারবাজারে তারল্য বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে। প্রধান সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ইকুইটি ফান্ড গঠন এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪ শতাংশ ভর্তুকিযুক্ত সুদে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদানের তহবিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বর্তমান ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে একাধিক কর প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখা, মূলধনী আয় বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর করের হার ৫ শতাংশে নামানো এবং মিউচুয়াল ফান্ডের কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো।
কমিটি বাজারের কাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে। বিশেষ করে বিএসইসি শক্তিশালী করা, আইসিবি পুনর্গঠন এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য। তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তাবিত ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড শুধুমাত্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার হবে এবং আইসিবির পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা দলের তদারকিতে পরিচালিত হবে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল আরও ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটি প্রস্তাব করেছে, আইসিবির অতীত পারফরম্যান্স পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত নতুন তহবিল হস্তান্তর করা উচিত নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য স্টক ডিলার, মার্কেট মেকার, ফান্ড ম্যানেজারদের সংখ্যা বৃদ্ধি, ব্রোকারেজ হাউসের মূলধন শর্ত পরিবর্তন এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয়ের সুদের হার সমন্বয়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটি ফ্লোর প্রাইস বাতিল, আইপিওর পর তালিকাভুক্তির সীমাবদ্ধতা অপসারণ এবং কোম্পানির ঋণ গ্রহণের সীমা ইকুইটির ২৫০ শতাংশে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাবও দিয়েছে। বাজার স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থমন্ত্রী বা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি নিয়ন্ত্রক সমন্বয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়াও, কমিটি বাজারের স্থবিরতার ৮টি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে: দুর্বল মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, উচ্চ ব্যাংক সুদ, প্রণোদনা প্রত্যাহার, জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বেশি মুনাফা, মূল্যস্ফীতি, আস্থার সংকট, ব্যাংকনির্ভর অর্থায়ন এবং কম তহবিল সংগ্রহ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশ কম হওয়া, কোম্পানিগুলোর সীমাহীন ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং খুচরা বিনিয়োগকারীদের উপর কর-প্রণোদনা হ্রাস বাজারের গতি কমানোর মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে দেশের শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের নতুন দিকনির্দেশনা সৃষ্টি হবে।
























