ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ঋণখেলাপিতে বেক্সিমকো: জার্মান ব্যাংকের আইনি পদক্ষেপের পথে বাংলাদেশ

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৯ জুন ২০২৫

আন্তর্জাতিক ঋণখেলাপিতে বেক্সিমকো: জার্মান ব্যাংকের আইনি পদক্ষেপের পথে বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো লিমিটেড এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ঋণখেলাপির অভিযোগে আলোচনায় এসেছে। জার্মানিতে ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ টার্ম লোন পরিশোধ না করায় ডাচ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইএনজি ব্যাংকের জার্মান শাখা বাংলাদেশ সরকারকে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-কে ইতোমধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছে ব্যাংকটি।

গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈদেশিক ঋণ ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট স্ক্রুটিনি কমিটির সভায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় আসে। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ঋণ আদায়ে প্রয়োজনে বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে জার্মান ব্যাংককে পরামর্শ দেবে কমিটি। এ ছাড়া বেক্সিমকো যদি ঋণ পরিশোধে অগ্রসর না হয়, তাহলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বিডাকে জানানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, বেক্সিমকো জার্মানির আইএনজি ব্যাংক থেকে নেওয়া ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর লোনের আসল অর্থ ও সুদ—কোনোটাই পরিশোধ করেনি। বিষয়টি নিয়ে বিডার কাছে জানতে চেয়েছে ব্যাংকটি—সরকার বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এর অগ্রগতি কতটুকু।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের মোট ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা, যার অর্ধেকই ছিল খেলাপি। শুধু জনতা ব্যাংক থেকেই বেক্সিমকো প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের ১৪টি কারখানা চলতি বছরের ৯ মার্চ থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিশোধ করা হয়েছে।

ঋণখেলাপির অভিযোগে আরেকটি আলোচ্য গ্রুপ দেশবন্ধু। চেক প্রজাতন্ত্রের বানিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৪.১০ মিলিয়ন ইউরোর ঋণ নিয়ে পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় চেক প্রজাতন্ত্রের দিল্লি দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গেও স্ক্রুটিনি কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশবন্ধু গ্রুপের ইস্যুতে চেক এক্সপোর্ট গ্যারান্টি অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের সঙ্গে ঋণগ্রহীতা পক্ষের যোগাযোগ ও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিডা।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন এবং বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকার তার ছেলে ও ভাতিজার নামে থাকা সম্পত্তি জব্দ করেছে। অন্যদিকে, দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘দেশবন্ধু পলিমার’ দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।

এই পরিস্থিতি দেশের বড় করপোরেট গ্রুপগুলোর আন্তর্জাতিক আর্থিক সম্পর্ক ও সুনামের ওপর বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।