ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

৫৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হামিদ ফেব্রিক্স: সম্পদ নিলামের পর মালিকদের তলব

৫৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হামিদ ফেব্রিক্স: সম্পদ নিলামের পর মালিকদের তলব

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেড এবার অর্থঋণ আদালতের নজরদারিতে এসেছে। ব্যাংক এশিয়া থেকে নেওয়া ৫৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ সাতজন পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংকটি। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকার দ্বিতীয় অর্থঋণ আদালত আসামিদের তলব করেছে এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত সমনের মাধ্যমে ১৭ জুনের মধ্যে লিখিত বিবৃতি জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি—আসামিরা আদালতে হাজির হয়েছেন কি না কিংবা কোনো লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছেন কি না। হামিদ ফেব্রিক্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা আদালতের সমনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানেন না, তবে ব্যাংকের কাছে ঋণ স্বীকার করে তা পরিশোধের চেষ্টা চলছে।

ঋণ আদায়ে ব্যাংক এশিয়া ইতোমধ্যে সম্পদ নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটি হামিদ ফেব্রিক্সের নরসিংদীতে অবস্থিত ২৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, কারখানার ভবন ও যন্ত্রপাতি নিলামে তুলতে দরপত্র আহ্বান করে। এর আগে বারবার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শুরুতে ভালো করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি ঘটেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হামিদ ফেব্রিক্স প্রায় ৩৭ কোটি টাকা লোকসান করে, যার ফলে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪ টাকা ৬ পয়সা। এই আর্থিক দুরবস্থার কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ডও ঘোষণা করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

অর্থবছরের প্রথমার্ধ (২০২৩-২৪) শেষে লোকসানের ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি ২৬ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে এবং শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৮৬ পয়সা। কোম্পানিটি এখনও পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের নয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি, এমনকি বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) আয়োজন করতে পারেনি। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে আসার সময় হামিদ ফেব্রিক্স সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে ও ৭২ কোটি টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর কোনো সুফল দেখা যায়নি। বরং কোম্পানির লোকসান এবং ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করেছে।

আজ (১৮ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে হামিদ ফেব্রিক্সের প্রতিটি শেয়ার ৭ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে, যা ইস্যু দামের চেয়েও নিচে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে—বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

হামিদ ফেব্রিক্সের ঋণখেলাপি ও অনিয়মিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা শুধু কোম্পানির নয়, পুরো পুঁজিবাজারের জন্যই সতর্ক সংকেত হয়ে উঠেছে। আদালতের তলব, সম্পদ নিলাম ও ক্রমাগত লোকসানের এ চিত্র বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত—যেখানে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে বিনিয়োগ সুরক্ষা দুরূহ।