
মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার ঘটনায়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের প্রতিটি সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালানো হবে। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে আঘাত হানা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও হামলা চলবে। পাশাপাশি তিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি মোকাবেলায় সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় ১৫০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ইসপাহানের পারমাণবিক স্থাপনা পর্যন্ত। আইডিএফ মুখপাত্র স্পষ্ট করে জানান, ইসরায়েলের অভিযানের গতি এখনো থামেনি, বরং ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক অবস্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়, ইরান দাবি করেছে তারা ইসরায়েলের তিনটি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং দুজন পাইলটকে আটক করেছে। একটি যুদ্ধবিমানের পাইলট নিহত হয়েছেন বলে জানায় তেহরান টাইমস। ইরানের সামরিক সূত্র বলছে, এই হামলা ইসরায়েলের ‘আগ্রাসনের প্রকৃত জবাব’ মাত্র। পাশাপাশি ইরানের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়েছেন, হামলা এখানেই শেষ নয়, বরং এটি আরও যন্ত্রণাদায়কভাবে চলবে।
ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স যদি ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তাহলে তাদের সামরিক ঘাঁটি ও জাহাজও হামলার লক্ষ্য হবে। তবে এখনো যুক্তরাজ্য কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে, পাকিস্তান ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সব মুসলিম দেশকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, যদি মুসলিম বিশ্ব এখনই একত্র না হয়, তাহলে সবাইকেই একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি ওআইসি'র জরুরি বৈঠক ডাকার প্রস্তাবও দেন তিনি।
ইসরায়েলি হামলার জেরে তেহরান আজ (শনিবার) সকালেও বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। যাত্রীশূন্য কাউন্টার আর বাতিল ফ্লাইটের তালিকা যেন ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
জর্ডান, যার ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, তাদের আকাশসীমায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে। এমনকি আজ ইরবিদ শহরে একটি বিস্ফোরক বস্তু পড়লে দুজন সাধারণ নাগরিক আহত হন এবং একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তেই থাকে, তবে তেহরানকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। তিনি ইরানের নেতৃত্বকে সাধারণ মানুষকে ‘জিম্মি’ করে রাখার অভিযোগ এনে পাল্টা হামলার কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক নেতা বলেছেন, ইরানের জবাব প্রমাণ করেছে, কোনো ঔদ্ধত্যই শাস্তি ছাড়া পার পায় না। ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ডজনে ডজনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভেদ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
সার্বিকভাবে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—তা দ্রুতই একটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।