
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি বড় মামলার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের লিটিগেশন ফান্ড সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সম্প্রতি লন্ডনে আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ডিএলএ পাইপার আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। আলোচনায় ওমনি ব্রিজওয়ে, বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটাল, আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল এবং ইউনিটাস গ্লোবালের মতো আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডিং ও তদন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ড. মনসুর জানান, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো প্রধান অর্থপাচার গন্তব্যে মামলা পরিচালনার জন্য একটি ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকল’ (এসপিভি) গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে, যা প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বা পরিবর্তনের প্রভাব থেকেও রক্ষা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গোপনীয়তা চুক্তি (NDA) সই করে তথ্য বিনিময় শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যাতে দ্রুত মামলা পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করা যায়।
লন্ডনে ১০ থেকে ১৩ জুন চার দিনব্যাপী সরকারি সফরের অংশ হিসেবে গভর্নর মনসুর এ আলোচনায় অংশ নেন। যদিও তিনি প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্যে যান, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে তিনি স্বতন্ত্রভাবে বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন, যা সম্পদ পুনরুদ্ধার, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ সফরের সময় তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) পরিদর্শনে যান এবং আইএসিসিসি প্রধান ড্যানিয়েল মারফিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি ১১টি অগ্রাধিকার মামলার যৌথ তদন্ত দলের (JIT) কারিগরি সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বৈঠকে উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন ডলার এবং বেক্সিমকোর শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের ৯০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করা বাংলাদেশের সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার বড় অর্জন। এসব সাফল্য আরও দেশকে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে সংশ্লিষ্টরা একটি কৌশলগত মোড়ফের হিসেবে দেখছেন, যা দেশের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।