
দেশে যখন ব্যাংকিং খাতে আস্থা, তারল্য সংকট ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫) আমানত বেড়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনার কারণে এই প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। এটি ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছে।
কোন ব্যাংকে কত আমানত বেড়েছে?
ডাচ-বাংলা ব্যাংক
তালিকার শীর্ষে থাকা এই ব্যাংকে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৭ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংক
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এই ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। মার্চ শেষে মোট আমানত হয়েছে ৭৬ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
এই প্রান্তিকে ব্যাংকটি সংগ্রহ করেছে ৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এর ফলে মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা, যা দেশের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।
সিটি ব্যাংক
ইপিএস ভালো হওয়াসহ স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনায় এই ব্যাংক অর্জন করেছে ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকার নতুন আমানত। মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যাংক
-
পূবালী ব্যাংক: ২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা
-
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB): ২ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা
-
আইএফআইসি ব্যাংক: ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা
-
যমুনা ব্যাংক: ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা
-
ইস্টার্ন ব্যাংক: ১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা
এই ব্যাংকগুলো মূলত কঠোর নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ভালো গ্রাহকসেবা এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দেওয়ার কারণে আমানতকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সরকারি ও আন্তঃব্যাংক বাদে মোট ব্যাংক আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, যা এক বছর আগের তুলনায় ৮.২১% বেশি।
বিশ্লেষণ ও বিনিয়োগ পরামর্শ:
এই প্রবৃদ্ধি স্পষ্ট করে যে জনগণ ব্যাংকিং খাতের প্রতি নতুন করে আস্থা রাখছে। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসা এবং প্রশাসনের পরিবর্তনের পর বাজারে স্থিরতা এসেছে, যা আমানত বৃদ্ধির অন্যতম চালক।
বিনিয়োগকারীদের জন্য সুপারিশ:
-
ডাচ-বাংলা, ব্র্যাক, ইসলামী এবং সিটি ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানে আয় ও স্থিতিশীলতা দুটোই রয়েছে, যা বাজারে মূল্যবান সিগন্যাল।
-
যেসব ব্যাংক তারল্য সঙ্কট থেকে নিরাপদ এবং গ্রাহকভিত্তি বিস্তৃত, সেসব ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
-
তবে ব্যাংকের প্রকৃত লাভ, প্রভিশন কভারেজ এবং এনপিএ (অনাদায়ী ঋণ) অনুপাত বিশ্লেষণ না করে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।
এছাড়া রাজনৈতিক ও মুদ্রানীতির গতিপথও আমানত প্রবণতায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে — তাই তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি।