দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদি মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও কিছু ‘বনেদি’ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে নতুন আশার প্রতীক। ২০২৪ সালে তালিকাভুক্ত ৪১২টি কোম্পানির মধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠান কোনো ডিভিডেন্ড না দিলেও ১৩টি কোম্পানি ১০০ শতাংশেরও বেশি ডিভিডেন্ড দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো দৃঢ় মৌলভিত্তি, স্থিতিশীল আয় এবং প্রজ্ঞাবান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতিতেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন ও টেকসই মুনাফা অর্জন সম্ভব। অধিকাংশ কোম্পানিই বহুজাতিক কিংবা সরকারের মালিকানাধীন হলেও পরিচালনায় দক্ষ এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল।
১৩ কোম্পানির তালিকা
উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলো হলো—রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার, ম্যারিকো, লিন্ডে বিডি, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাটা সু, রেনেটা, স্কয়ার ফার্মা, ওয়ালটন, পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম।
রেকর্ড ব্রেকার রেকিট বেনকিজার
এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেড, যারা ২০২৪ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য দিয়েছে রেকর্ড ৩৩৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। ধারাবাহিকভাবে উচ্চ ডিভিডেন্ড প্রদানকারী এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছে এক ‘নির্ভরতার প্রতীক’।
ইউনিলিভার ও ম্যারিকো
পরবর্তী অবস্থানে থাকা ইউনিলিভার বাংলাদেশ দিয়েছে ৫২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড এবং ম্যারিকো বাংলাদেশ দিয়েছে চমকপ্রদ ১৯২০ শতাংশ। এই দুই প্রতিষ্ঠানই নিয়মিতভাবে মুনাফার বড় অংশ শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে।
বার্জার পেইন্টস ও বাটা সু
রং শিল্পের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বার্জার পেইন্টস দিয়েছে ৫০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। আর জুতা শিল্পের অন্যতম পুরোনো ব্র্যান্ড বাটা সু দিয়েছে ১০৫ শতাংশ। কিছুটা সময় নিম্নমুখী থাকলেও বাটা এখন পুনরুদ্ধার করছে অবস্থান, আর বার্জার সব সময়ই মুনাফায় স্থিতিশীল।
লিন্ডে বিডি ও গ্রামীণফোন
লিন্ডে বাংলাদেশ দিয়েছে ৪০০ শতাংশ এবং গ্রামীণফোন দিয়েছে ৩৭০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। তাদের ধারাবাহিক রাজস্ব প্রবাহ ও শক্তিশালী অপারেশনাল পারফরম্যান্স এই অর্জনের ভিত্তি।
ওয়ালটন ও রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো
দেশীয় ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ দিয়েছে ৩২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। অপরদিকে, জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত তিন জায়ান্ট—মেঘনা পেট্রোলিয়াম (১৭০%), যমুনা অয়েল (১৫০%) এবং পদ্মা অয়েল (১৪০%)—সরকারি মালিকানাধীন হলেও পরিচালনায় দক্ষতা ও মুনাফা বণ্টনে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
স্কয়ার ও রেনেটা
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ২০২৪ সালে দিয়েছে ১১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। ওষুধ খাতের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি হিসেবে এটি দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য। আর রেনেটা একসময় ডিভিডেন্ডে শীর্ষে থাকলেও বর্তমানে কিছুটা চাপে রয়েছে, তবু মৌলিক শক্তিতে এখনো সক্রিয় রয়েছে।
