ঢাকা   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

“ফ্লোর প্রাইস উঠতেই পিছু হটলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা”

“ফ্লোর প্রাইস উঠতেই পিছু হটলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা”

বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বরাবরই শেয়ারবাজারে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হতো। আন্তর্জাতিক মান, স্থিতিশীল আয় ও নিয়মিত ডিভিডেন্ড কারণে এসব কোম্পানিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল দৃঢ়। তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই আস্থায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।

ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ১১টি বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে ৮টির শেয়ার চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশিরা আংশিক বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় ১০৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বিক্রি হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: রেকিট বেনকিজার, ম্যারিকো, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাটা সু, লাফার্জহোলসিম, আরএকে সিরামিকস, সিঙ্গার বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোন।

অপরদিকে, বার্জার পেইন্টস, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার ও হাইডেলবার্গ সিমেন্টে বিদেশিদের বিনিয়োগে চলতি বছর কোনো পরিবর্তন আসেনি।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রধান কারণগুলো:

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন

ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রিচার্ড ডি' রোজারিও বলেন, “যখন ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হয়, তখন বাজার থেকে এক্সিটের পথ বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশিরা এটাকে ‘নন-কমপ্লায়েন্ট মার্কেট’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলে তারা সুযোগ পেলেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।”

কিছু শীর্ষ কোম্পানির পর্যালোচনা:

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

বিক্রি: ১৭.৮২ লাখ শেয়ার

বাজারমূল্য: ৫০.৮২ কোটি টাকা

সর্বশেষডিভিডেন্ড (২০২৪): ৩০০% ক্যাশ

রেকিট বেনকিজার

বিক্রি: ৪৮,৬৬৮ শেয়ার

বাজারমূল্য: ১৬.২৭ কোটি টাকা

সর্বশেষ ডিভিডেন্ড: ৩৩৩০% ক্যাশ (২০২৪)

ম্যারিকো বাংলাদেশ

বিক্রি: ৩৭,৮০০ শেয়ার

বাজারমূল্য: ৯.১৮ কোটি টাকা

সর্বশেষ ডিভিডেন্ড: ৩৮৪০%ক্যাশ (২০২৪)

সিঙ্গার বাংলাদেশ

বিক্রি: ১৩.৬৫ লাখ শেয়ার

বাজারমূল্য: ১৫.০৬ কোটি টাকা

সর্বশেষ ডিভিডেন্ড: ১০%ক্যাশ (২০২৪)

গ্রামীণফোন

বিক্রি: ২.৭০ লাখ শেয়ার

বাজারমূল্য: ৮.১৯ কোটি টাকা

সর্বশেষ ডিভিডেন্ড: ৩৩০%ক্যাশ (২০২৪)

বিশ্লেষক মো. আশিকুর রহমান বলেন,“শুধুডিভিডেন্ড নয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টাকার অবমূল্যায়ন হলে মুনাফা থেকেও লোকসান হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের অস্থিরতার কারণে অনেকেই বাজার থেকে ফান্ড তুলে নিয়েছেন।” 

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মৌলিক ভিত্তি এখনো শক্ত। কিন্তু শেয়ারবাজারের ওপর বিদেশিদের আস্থা নষ্ট হয়েছে মূলত নীতিগত অনিশ্চয়তা ও আর্থিক পরিবেশের ঝুঁকির কারণে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে বৈদেশিক বিনিয়োগ টানতে হলে টাকার মান, নিয়ন্ত্রক নীতিমালা এবং বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।