
যে কোনো নেতৃত্বের মাঝে নির্ভরযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের মস্তিষ্ক সর্বদা নির্ভরযোগ্যতা চায়। নির্ভরযোগ্যতার অভাবে উদ্বেগ, ভয় ও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। যারা সফল নেতা হয়ে ওঠেন তাদের মাঝে নির্ভরযোগ্যতা দেখা যায়। এ লেখায় তুলে ধরা হলো নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ফোর্বস।
অনিশ্চয়তা দূর করতে
আমরা সর্বদা নিশ্চয়তা চাই। আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় দুই মিলিয়ন ‘তথ্য পয়েন্ট’ সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণে সক্ষম। এ তথ্য ব্যবহার করে আমরা অনিশ্চিত বিষয়েও পূর্বানুমাণ করতে পারে। তবে আমাদের মস্তিষ্ক অনিশ্চয়তা পছন্দ করে না। সর্বদা নিশ্চিত বিষয়গুলোকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আর এ কারণেই আমাদের মস্তিষ্ক নিশ্চয়তাপূর্ণ কাজে অগ্রাধিকার দেয়। আর এ কারণে নেতারা সর্বদা অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো দূর করতে চায়।
সফল নেতৃত্ব চায় নিশ্চয়তা
ব্যবসাক্ষেত্রে পরিস্থিতি অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এখানে সর্বদা অনিশ্চয়তা কাজ করে। বাজারের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা কারোই জানা থাকে না। আগামী মাসে কী হবে কিংবা আগামী বছর কী হবে, এ বিষয়ে মাঝে মাঝে কোনো ধারণাই পাওয়া যায় না। আর এ পরিস্থিতিতে মানুষের মস্তিষ্ক অনিশ্চয়তাকে একটি বড় হুমকি হিসেবে মনে করে। এ অনিশ্চয়তায় মানুষের দেহে কর্টিসল হরমোন নিঃস্বরণ হয়। এটি স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে, রক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও মানসিকভাবে বিষণ্ণতার কারণ হয়। আর নেতারা কখনোই এতগুলো ক্ষতিকর বিষয়ের ঝুঁকিতে থাকতে চায় না।
সফল নেতার কিছু গুণ
সফল নেতার মাঝে কিছু গুণ দেখা যায়, যা তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে। এ গুণগুলো হলো-
তারা শক্তিশালী কিন্তু কঠোর নন
শক্তিশালী মানসিকতা একজন নেতার অত্যন্ত বড় গুণ। একজন নেতা সত্যিই শক্তিশালী কি না, বিষয়টি বোঝার জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। মানুষ তার নেতাকে শক্তিশালী রূপে দেখতে চায়। তারা এমন একজন মানুষ চায় যার রয়েছে প্রকৃত শক্তি। যিনি তার প্রজ্ঞা ব্যবহার করে কঠিন সব বিষয়ে সঠিক ও শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নেন তাকেই মানুষ প্রকৃত নেতা হিসেবে গণ্য করে। এখানে শক্তির সঙ্গে কঠোরতার বিষয়টি অনেক নেতাই গণ্ডগোল করে ফেলেন। কঠোরতা ও অন্যকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা মোটেই ভালো ফল দেয় না।
তারা জানেন কখন নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে
সফল নেতারা সর্বদা নিজের ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রাচীনকাল থেকেই বেঁচে থাকার প্রচেষ্টায় মানুষ নিজের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে বিশ্বাস করে। তবে জীবন-মরণের সমস্যার মুখোমুখি আমরা সর্বদা হই না। তাই আমাদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়গুলো নিজেকেই শিখে নিতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই ভুল করে থাকি। তবে সফল নেতারা কিছু নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন।
তারা ইতিবাচক
সফল নেতারা নিরলসভাবে ইতিবাচক হওয়ার চেষ্টা করেন। তারা সর্বদা ‘গ্লাসের অর্ধেকটি খালি’ নয় বরং ‘অর্ধেকটি ভরা’ হিসেবে দেখতেই পছন্দ করেন। এ কারণে তারা কোথায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা ধরতে পারেন। তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে যথাযথ প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা থাকে।
তারা আত্মবিশ্বাসী
আমরা সর্বদা আত্মবিশ্বাসী মানুষকে পছন্দ করি। ভালো নেতা হতে হলে আত্মবিশ্বাসী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভালো নেতারা নিজের বিচক্ষণতার ওপর আস্থা রাখেন। তারা নিজের বিশ্বাস ও বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী কাজ করেন।
নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়কে মেনে নেন
আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পছন্দ করি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, সব বিষয়কেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরা যে বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না সে বিষয়গুলোকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো মানে হয় না। এ বিষয়টি ভালো নেতারা সর্বদা মনে রাখেন। তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন না।
তারা রোল মডেল, প্রচারক নন
আদর্শ নেতাদের অন্যরা সর্বদা অনুসরণ করেন। কিন্তু তারা নিজেরা কোনো বিষয় প্রচার করেন না। অন্যরাই তাদের গুণাগুণ দেখে অনুসরণে এগিয়ে আসেন। তারা অন্যের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়।
তারা ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট
সফল নেতারা সর্বদা অনিশ্চয়তার মাঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এর পেছনে কাজ করে বিশেষ একটি গুণ, যার নাম ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ বা আবেগগত বুদ্ধিমত্তা। তারা এ বিষয়টি ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যান।
‘যদি’ নিয়ে তারা চিন্তিত নন
‘বিষয়টি যদি এমন না হয়ে অমন হতো তাহলে কী হতো?’ এ ধরনের চিন্তা করে কখনোই সময় নষ্ট করেন না তারা। এ ধরনের চিন্তা মস্তিষ্ককে ব্যতিব্যস্ত রাখে এবং সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করতে বাধা দেয়।
দায় নিতে দ্বিধাহীন
যে কোনো দোষের দায় নিতে কখনোই দ্বিধা করেন না সত্যিকার নেতারা। তারা নিজের ব্যর্থতার দায় অন্য কারো ওপর চাপান না। অন্যরা যে বিষয়ে কথা বলতে ভয় পায়, সে বিষয়ে কথা বলতেও তারা সাহস করে এগিয়ে যান।
শেয়ার বিজনেস24.কম