
রোজা শুধু রমজানে নয়, সারা বছর নফল রোজার সময় থাকে। ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজা মুমিনের জন্য পুণ্য বৃদ্ধি ও সংযমে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার একটি অনুশীলন হতে পারে। নফল রোজার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও তাকওয়ার প্রকাশ ঘটে।
নফল রোজার প্রকার
নফল রোজা অনেকগুলো প্রকার আছে। প্রধান কয়েকটি নফল রোজা হলো—
১. সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতি এই দুই দিন আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমলনামা রোজার অবস্থায় পেশ হোক।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৭৪৭)
২. আইয়ামে বিজ (১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোজা): প্রতি হিজরি মাসের এই তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিন দিন রোজা রাখলে যেন সারা মাস রোজা রাখা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৯৭৫)
এর কারণ হলো এই উম্মতের জন্য প্রতিটি আমলে দশগুণ সওয়াব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাই মাসে তিন দিন রোজা রাখা হলে দশগুণ বৃদ্ধি হয়ে তা এক ত্রিশ দিন বা একমাসের সমতুল্য হয়।
৩. আরাফার দিনের রোজা: হাজি ছাড়া অন্যদের জন্য জিলহজ মাসের ৯ তারিখে রোজা রাখা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের রোজা পূর্বের ও পরের বছরের গুনাহ মাফ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,১৬২)
৪. আশুরার রোজা: মহররম মাসের ৯ ও ১০ বা ১০ ও ১১ তারিখে রোজা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার রোজা পূর্ববর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,১৬২)
৫. দাউদ (আ.)–এর রোজা: এক দিন রোজা থাকা, এক দিন না রাখা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো দাউদের রোজা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪২০)
৬. শাওয়ালের ছয় রোজা: শাওয়াল মাসে যেকোনো ছয় দিন রোজা রাখা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং শাওয়ালে ছয় রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,১৬৪)
নফল রোজার নিয়ত
রোজার জন্য নিয়ত করা জরুির। নফল রোজার নিয়ত মনে মনে বা মুখে করা যায়। ফরজ রোজার মতো নফল রোজার নিয়তও রাতে বা সাহ্রির সময় করা উত্তম। তবে দিনের শুরুতে বা জোহরের আগে করলেও চলবে।
নিয়তের একটি সাধারণ উদাহরণ হলো:
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আসুমা গদান লিল্লাহি তা’আলা মিন নাফলি সাওম।
অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য আগামীকাল নফল রোজা রাখার নিয়ত করছি।
নির্দিষ্ট রোজার জন্য নিয়তের বেলায় নির্দিষ্ট নাম বসিয়ে নিলেই হবে। যেমন, আরাফার রোজার নিয়তে বলা যায়:
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আসুমা গদান লিল্লাহি তা’আলা সাওমা আরাফা।
অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য আগামীকাল আরাফার রোজা রাখার নিয়ত করলাম।
এভাবে ‘আশুরা’র রোজা হলে ‘আরাফা’র স্থানে ‘আশুরা’ বললেই হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, নিয়ত করা জরুরি বটে কিন্তু নিয়তের জন্য আরবি উচ্চারণের জরুরি নয়, বরং আরবি জানা না থাকলে বাংলায় মনে মনে নিয়ত করলেই হবে।
নফল রোজার ফজিলত অপরিসীম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৯০৪)