
রাজধানীর বাজারে ইলিশের দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। এক কেজি নদীর ইলিশ কিনতে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ২,৫০০ টাকা, যা পোশাক খাতের একজন শ্রমিকের ছয় দিনের মজুরির সমান। এ দামে একটি মধ্যম পরিবারের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল এবং দুই মাসের গ্যাস বিল পরিশোধ করা যায়।
ছোট ইলিশও অনেকের নাগালের বাইরে। ৫০০ গ্রাম ইলিশের কেজি দেড় হাজার এবং ৮০০ গ্রাম ইলিশের দাম প্রায় দুই হাজার টাকা। সাগরের ইলিশ কিছুটা সস্তা হলেও এখনো অনেক দামি।
বাজারে ইলিশের মৌসুম শুরু না হলেও সরবরাহে ঘাটতি এবং বেশি চাহিদার কারণে দাম আকাশচুম্বী। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে ইলিশের দাম বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। অথচ অন্য মাছের দাম প্রায় একই রয়ে গেছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, মা ইলিশ ও জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নজরদারির অভাবের সুযোগে অনেকেই আইন অমান্য করেছেন। ফলে, উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে অনেকটাই কম। এ বছরও উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে।
বাজারে ইলিশের এ অস্বাভাবিক দাম অনেককে হতবাক করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করছেন, যা সরকারিভাবে মনিটর করে থামাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কম এবং খরচ বেশি হওয়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
সার্বিকভাবে ইলিশের দাম এতটা চড়া থাকার পেছনে রয়েছে সরবরাহ সংকট, চাহিদা বৃদ্ধি, সিন্ডিকেট এবং ইলিশ সংরক্ষণের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া।
সব মিলিয়ে ইলিশ যেন এখন সবার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে, যার সমাধানে প্রয়োজন কার্যকরী বাজার মনিটরিং এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে টেকসই পরিকল্পনা।