ঢাকা   রোববার ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১১৪০ কোটি টাকার মূলধন শূন্য ঘোষণা

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১১৪০ কোটি টাকার মূলধন শূন্য ঘোষণা

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর ইতিহাসে এক চরম এবং নজিরবিহীন বিপর্যয় নেমে এসেছে। ব্যাংকটির ১১৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকার সম্পূর্ণ পরিশোধিত মূলধন কমিয়ে ‘শূন্য’ করার আদেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর মাধ্যমে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক রেজোলিউশন বিভাগ’ গত ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর ৩৩ ধারার ক্ষমতাবলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের জন্য একটি বিশেষ আদেশ (আদেশ নং: BRD/2025-1) জারি করেছে। এই আদেশের মূল লক্ষ্য হলো ব্যাংকটির বর্তমান মূলধন কাঠামোকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করে নতুনভাবে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া।


আদেশ অনুযায়ী, ব্যাংকটির ইস্যু করা সমস্ত শেয়ার এখন থেকে পুরোপুরি বাতিল বলে গণ্য হবে। এর ফলে ব্যাংকটির সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারগুলোর কোনো আর্থিক মূল্য অবশিষ্ট থাকল না। বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ করা অর্থের বিপরীতে এখন থেকে আর কোনো মালিকানা দাবি করতে পারবেন না।

এই সিদ্ধান্তের ফলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের সমস্ত অধিকার তাৎক্ষণিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকটির কোনো বিষয়ে শেয়ারহোল্ডাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। এছাড়া ডিভিডেন্ড, কোনো ধরনের দাবি বা আইনি প্রতিকার পাওয়ার অধিকারও তাদের আর থাকছে না। আদেশের মাধ্যমে ব্যাংকটির বর্তমান মালিকানা কাঠামোকে পুরোপুরি ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আদেশটি গত ২১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হলেও এটি গত ০৫ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ, নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই ব্যাংকটির মূলধন ও শেয়ারের কোনো অস্তিত্ব আইনিভাবে আর বজায় ছিল না। এই আদেশ কার্যকর করার জন্য ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডার, পাওনাদার, স্টক এক্সচেঞ্জ বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে না।


ব্যাংকটির বর্তমান প্রশাসক এখন আরজেএসসি, বিএসইসি, সিডিবিএল এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে এই মূলধন শূন্য করার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। ব্যাংকটির সমস্ত বিধিবদ্ধ রেকর্ডে শেয়ার বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটি এখন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্গঠনের নতুন ধাপে প্রবেশ করল।

বিনিয়োগকারীদের জন্য এই সংবাদ চরম হতাশাজনক হলেও সাধারণ গ্রাহক ও আমানতকারীদের জন্য আশ্বাসের বাণী দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদেশে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে আমানতকারীদের অধিকার এবং ব্যাংকিং সেবার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে এবং আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে যে, ব্যাংকটিকে রক্ষার খাতিরে ভবিষ্যতে আরও প্রয়োজনীয় ‘রেজোলিউশন অ্যাকশন’ নেওয়ার ক্ষমতা তাদের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। মূলত বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম বা মূলধন সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বজুড়ে এ ধরনের মূলধন শূন্য করার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা এবার এসআইবিএল-এর ক্ষেত্রে কার্যকর করা হলো।