ঢাকা   সোমবার ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংক লুটপাট: দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

পাঁচ ব্যাংক লুটপাট: দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকে দীর্ঘদিনের লুটপাট ও অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে।

সরকার স্পষ্ট করেছে—এই পাঁচ ব্যাংকের মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বড় খেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি অনিয়ম করে নেওয়া ঋণ ও বিনিয়োগ দ্রুত পুনরুদ্ধারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হবে একটি নতুন শক্তিশালী ব্যাংক; যার পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি দেবে সরকার এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আমানতকারীদের অর্থ থেকে শেয়ার রূপে সমন্বয় করা হবে।

বিশেষ করে এক্সিম ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করতেন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তার স্ত্রী নাসরিন ইসলাম ও ঘনিষ্ঠ পরিচালকরা বোর্ডে প্রভাব বিস্তার করতেন। তিন এমডি—ফরীদ উদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন—সংকটকালীন সময়ে ছিলেন নেতৃত্বে। বর্তমানে নজরুল ইসলাম মজুমদার ও ফিরোজ হোসেন কারাগারে রয়েছেন।

ইউনিয়ন ব্যাংকের ক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের প্রভাব ছিল প্রাধান্যপূর্ণ। ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন আহসানুল আলম, পরে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মো. সেলিম উদ্দিন। গ্রুপের প্রধান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের সদস্যরা বোর্ডে ছিলেন। সাবেক এমডি মোকাম্মেল হক সরকার পরিবর্তনের পর বিদেশে পালিয়ে যান। দীর্ঘদিন এএম জাকারিয়া ও সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর অধীনে অনিয়ম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন নিজাম চৌধুরী; বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন এস আলম গ্রুপঘনিষ্ঠ। আলোচিত পিকে হালদার ও পরে হাবিব হাসনাত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সময় অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা ব্যাংকটিকে গভীর সংকটে ফেলে।

এসআইবিএল ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পরও অনিয়ম থেমে থাকেনি। বোর্ডে পরিবর্তন এলেও কার্যত সমস্যার সমাধান হয়নি।

সরকার মনে করছে—বহু বছরের অব্যবস্থাপনা দূর করতে এবং নতুন ব্যাংককে ঝুঁকিমুক্ত করতে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্যকর তদন্ত ও দায় নির্ধারণই নতুন ব্যাংকের স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রধান শর্ত।