ঢাকা   মঙ্গলবার ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২

সরকারের না — ৬ ব্যাংকের ফরেনসিক নিরীক্ষা প্রস্তাব বাতিল

অর্থ ও বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৫ আগস্ট ২০২৫

সরকারের না — ৬ ব্যাংকের ফরেনসিক নিরীক্ষা প্রস্তাব বাতিল

 রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট করার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। এই পদক্ষেপে ব্যাংক খাতের গভীর সমস্যা সমাধানে সরকারের পূর্ণ স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।

বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বিদেশী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে এসব ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের প্রস্তাব করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতার প্রকৃত চিত্র বের করা এবং তা পুনরুদ্ধারের জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া।


তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, সরকার বিশ্বব্যাংকের এই প্রস্তাবে রাজি নয়। কারণ, সরকার এসব ব্যাংকের সমস্যা সমাধানে ‘নিজস্ব’ সমাধান পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দেয়। যদিও এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এমন একটি নিরীক্ষায় ঋণ কেলেঙ্কারি এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত পর্ষদ নিয়োগসহ অন্যান্য অপারেশনাল অব্যবস্থাপনার প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শুরু থেকেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছেন। কারণ এসব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ফরেনসিক অডিট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকটের গভীরতা এবং সমস্যার মূল কারণ উন্মোচন করত। তিনি মনে করেন, ব্যাপক খেলাপি ঋণ এবং দুর্নীতির মাত্রা প্রকাশ এড়াতে সরকার এই ধরনের নিরীক্ষার বিরোধিতা করছে। যদি আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসে, তাহলে জনগণ প্রশ্ন তুলতে পারে যে সরকারের এই ব্যাংকগুলো পরিচালনা করা উচিত কি না। মুজেরি জোর দিয়ে বলেন, সমস্যার গভীরে পৌঁছাতে এবং কার্যকর সমাধান বাস্তবায়ন করতে একটি স্বাধীন বিদেশী নিরীক্ষা জরুরি।


অন্যদিকে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় দুটি বিদেশী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ছয়টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের ফরেনসিক নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ওই নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে বিলুপ্তির পরিকল্পনা করছে।

তবে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের ৭৫ শতাংশ বা ৭০ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। বেক্সিমকো গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের মতো বড় ঋণগ্রহীতা যথাক্রমে ২৪ হাজার ৬৮২ কোটি ও ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল, যার বেশিরভাগই এখন খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪১.৩৫ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৯ হাজার ৯১ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকের ১৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। এই আর্থিক অবনতির মূল কারণ হলো পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে পাচার।