
২০২৪ সাল বাংলাদেশের সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় সংকটের বছর ছিল, বিশেষ করে সামুদ্রিক বীমা খাতে। এই সময়ে দেশ এক তীব্র ডলার সংকটের সম্মুখীন হয়, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
সেই সময়ে ডলারের অভাবে ব্যাংকগুলো নতুন লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খুলতে পারছিল না, যার ফলস্বরূপ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। যেহেতু সামুদ্রিক বীমা সরাসরি এই বাণিজ্যিক লেনদেনের সাথে যুক্ত, এলসি খোলা কমে যাওয়ায় সামুদ্রিক বীমা ব্যবসাও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল, যা বীমা শিল্পকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। অনেক কোম্পানি তাদের সামুদ্রিক বীমা প্রিমিয়াম আয়ে ব্যাপক ধস দেখে, যা তাদের সামগ্রিক আর্থিক কর্মক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
তবে শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক থেকে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে শুরু করেছে। ডলার সংকট ধীরে ধীরে কমতে থাকায় এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুনরায় সচল হতে শুরু করেছে। এর ফলে নতুন এলসি খোলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরাসরি সামুদ্রিক বীমা খাতকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে।
সামুদ্রিক বীমা যেহেতু বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল, তাই আমদানি-রপ্তানি পুনরায় জোরদার হওয়ায় বীমা কোম্পানিগুলোর এই বিশেষ ব্যবসার লাইনটি আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। শিল্প সূত্রগুলো উল্লেখ করেছে, সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মোট ব্যবসার প্রায় ৬০ শতাংশই সামুদ্রিক বীমা থেকে আসে। বিগত ডলার সংকটের কারণে পূর্বে সামুদ্রিক বীমা ব্যবসা ৩৫-৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এই পুনরুদ্ধার প্রবণতা বীমা শিল্পে আশার সঞ্চার করেছে এবং কোম্পানিগুলো সামনের দিনগুলোতে আরও প্রবৃদ্ধির আশা করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৪২টি বীমা কোম্পানির জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯টি কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে, তবে ২২টির কমেছে। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা ১৮.৮৯ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা ৭৯ শতাংশ কমেছে।