ঢাকা   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

দাসত্ব থেকে ডিজাইনে মুক্তি: মেট গালায় ফিরে দেখা কৃষ্ণাঙ্গ ফ্যাশনের গৌরবগাথা

দাসত্ব থেকে ডিজাইনে মুক্তি: মেট গালায় ফিরে দেখা কৃষ্ণাঙ্গ ফ্যাশনের গৌরবগাথা

আজ ৬ মে, বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হলো ফ্যাশনের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ও অভিজাত আয়োজন—মেট গালা ২০২৫। নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে প্রতি বছর মে মাসের প্রথম সোমবার বসে এই জাঁকালো আসর। বিশ্বখ্যাত তারকা, ফ্যাশন ডিজাইনার, শিল্পী—সবাই একত্রিত হন এই আয়োজনে। তবে মেট গালা শুধু তারকাবহুল নয়, এটি ফ্যাশনের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দেয়।

এ বছরের থিম ছিল—“Superfine: Tailoring Black Style”—যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের ফ্যাশন, তার শিকড় ও সমাজে তার প্রভাবকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে সব আয়োজন। ‘টেইলরড ফর ইউ’ শিরোনামের ড্রেস কোড মেনে অংশগ্রহণকারীরা পরেছিলেন শিল্পনির্ভর, ইতিহাসসঞ্জাত, সুপরিকল্পিত পোশাক। এ যেন শুধু ফ্যাশন নয়—কৃষ্ণাঙ্গদের আত্মপরিচয়ের দীর্ঘ পথচলার এক নান্দনিক প্রতিবাদ।

মেট গালার এবারের আয়োজনে ফিরে দেখা হয় দাসপ্রথার অবসানের পর কৃষ্ণাঙ্গদের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ ও ফ্যাশনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। দাসত্ব বিলুপ্ত হলেও কৃষ্ণাঙ্গরা সমাজে মুখোমুখি হয় বৈষম্যের দেয়ালে। বঞ্চনার সেই অন্ধকার সময়েই জন্ম নেয় এক নতুন ফ্যাশনধারা—ব্ল্যাক ড্যান্ডিইজম। এটি শুধু পোশাক নয়, বরং একপ্রকার স্টেটমেন্ট, প্রতিবাদ, আত্মপ্রকাশ ও আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি।

এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি, যখন ফ্যাশনের মাধ্যমে নিজস্ব পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা করেন কৃষ্ণাঙ্গরা। প্রভাব পড়ে বিংশ শতাব্দীর হারলেম রেনেসাঁতেও, যেখানে ফ্যাশন হয়ে ওঠে আত্মপরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। শার্প স্যুট, রঙিন টাই, পালিশ জুতা ও হ্যাট—সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক স্বতন্ত্র ব্ল্যাক স্টাইল, যা আজও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

এই ধারাই এবার মেট গালায় ফিরে এল আধুনিক ব্যাখ্যায়। থিম অনুযায়ী ডিজাইন করা পোশাকগুলো শুধু ফ্যাশন নয়, ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ব্ল্যাক ড্যান্ডিইজম। হারলেম রেনেসাঁ থেকে শুরু করে সিভিল রাইটস মুভমেন্ট পর্যন্ত, এই ফ্যাশনধারাই কৃষ্ণাঙ্গদের আত্মবিশ্বাস ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে।

এবারের মেট গালা কেবল পোশাক প্রদর্শনী ছিল না, এটি ছিল ইতিহাসের ক্যানভাসে আঁকা এক গর্বিত কাহিনি—যেখানে ফ্যাশনের ছুতোয় বলা হলো দাসপ্রথা থেকে ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠার সংগ্রামী গল্প।