ঢাকা   বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

কলেজের জমি সাবেক এমপি খোকনের স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি!

গ্রামবাংলা

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ৯ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৬:৪৭, ৯ জুলাই ২০২৫

কলেজের জমি সাবেক এমপি খোকনের স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি!

গাংনী উপজেলার তেরাইল-জোড়পুকুর ডিগ্রি কলেজে মাঠের জন‍্য ফান্ডের টাকায় কেনা ৪২ শতক জমি সাবেক গভর্নিং বডির সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস‍্য সাহিদুজ্জামান খোকনের স্ত্রী লাইলা আরজুমান বানুর নামে রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, কলেজের জন্য কেনা হবে বলে রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে  জমিটি নিজের স্ত্রীর নামে নেন তিনি।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের স্ত্রী লাইলা আরজুমান বানুকে গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরই এই জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি জুলফিকার আলি ভুট্টো জানান, পার্শ্ববর্তী হওয়ায় ৪২ শতক জমি কলেজের জন্য কেনার বিষয়ে জমির মালিক প্রভাষক ফিদা হাসান ও তার বোনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দর-কষাকষি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সাব-রেজিস্টারকে সংসদ সদস্যের বাসভবনে নিয়ে গিয়ে জমি কলেজের ফান্ড থেকে কেনা হলেও রেজিস্ট্রি হয় সাবেক সভাপতির নামে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিন্টু এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

জমির মালিক ফিদা হাসান বলেন, তিনি ও তার বোন জমিটি বিক্রি করেছেন। তিনি কলেজের জন্য কেনা জমি তার নামে কেন রেজিস্ট্রি করা হবে তা জানতে চাওয়া হলে সেই সময়ের সংসদ সদস্য তাকে জানিয়েছিলেন, পরে কলেজকে জমিটি ফেরত দেওয়া হবে। মূলত আমি নিজেও একজন কলেজ প্রভাষক, তাই কলেজের জায়গা বৃদ্ধির জন‍্য নামমাত্র দামে আমি কলেজকে দিয়েছিলাম। তাছাড়া ওই জমির বতর্মান বাজার মূল‍্য আড়াই কোটি টাকা। আরো দুঃখের বিষয় হলো কলেজের যে দৃষ্টিনন্দন গেট করা হয়েছে সেই জাইগাটিও আমার, যা আমি বিক্রি করিনি। সেখানেও সাবেক এমপি ক্ষমতার বলে আমাকে না বলে কলেজ গেট নির্মাণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি এবং তার বোনের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক বলেন, তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আগে সব হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এবং কলেজের টাকা দিয়ে এমপির স্ত্রীর নামে জমি কেনার বিষয়ে অবগত নন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বেসরকারি কলেজগুলোতে যেভাবে কাজ চলে, তিনি তেমনভাবেই কলেজ পরিচালনা করেছেন।

সরকার পরিবর্তনের পর ৫ আগস্ট থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন ও তার সহধর্মিণী লাইলা আরজুমান বানু আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই জমি রেজিস্ট্রির ঘটনা কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজের অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা বিষয়টিকে নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বতর্মান কমিটির কাছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চুপ থাকা নিয়ে নানা প্রশ্নও ঊঠেেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস‍্য বলেন, সাবেক এমপি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন তার ক্ষমতার অপব‍্যাবহার করে তার স্ত্রীকে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানিয়ে অনৈতিক সুবিধার মাধ‍্যমে লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিজ গ্রামসহ দেশ ও দেশের বাহিরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার সাথে ভাই-ভাতিজাসহ পরিবারের অনেক সদস‍্য জড়িত ছিলো। অথচ এমপি আর তার স্ত্রী-সন্তান বাদে সকলে প্রকাশ‍্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কারোর কোন সমস্যা নেই। অথচ তাদের কারনে আজ কলেজেটিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তদন্তের মাধ‍্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব‍্যাবস্থা গ্রহণ করা হোক- এটা এখন সাধারণ মানুষের দাবিতে পরিনত হয়েছে।

আগামীতে কেউ যেন অবৈধভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা বা সম্পদ আত্মসাত করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।