ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে ঘের ও সবজি ক্ষেত

গ্রামবাংলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৯ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২১:৩১, ৯ জুলাই ২০২৫

সর্বশেষ

সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে ঘের ও সবজি ক্ষেত

গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডসহ সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

এতে করে আমন বীজতলা, আউশ ধান, সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।  ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। তবে কত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তার এখনো সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি মৎস্য ও কৃষি বিভাগ।

 এদিকে সুষ্ঠ ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে সাতক্ষীরা পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ নিম্ন এলাকার দোকানপাট, বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও বাড়ির আঙ্গিনা ও রাস্তাঘাটে পানি জমে আছে।  ডুবে গেছে টিউবওয়েল। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। চরম দুর্ভোগে রয়েছে এলাকাবাসী।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, গত এক সপ্তাহে সাতক্ষীরায় ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।

 এই অতি বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অন্তত ১৫ টি এলাকা প্লাবিত হয়ে জলমগ্ন হয়ে আছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কোন কোন এলাকায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পৌরসভার মধুমল্লারডাংগি, কামাননগর, পুলিশ লাইন, সবুজবাগ, সার্কিট হাউজ এলাকা,রসুলপুর, রথখোলা,রাজার বাগান, বদ্দিপুর কলোনি ও পার মাসখোলা। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।এসব এলাকার বসত বাড়িতে কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও হাঁটু পানি জমে রয়েছে। 

 পৌরসভার সুষ্ঠ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার ২০০ থেকে ২৫০ পরিবার  জলমগ্ন হয়ে পড়েছে । রাস্তাঘাট বসতবাড়িতে পানি জমে থাকায় চলাচল করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। বসত বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় গৃহস্থলীর রান্নাবান্না ও নিত্য প্রয়োজনীয়  কাজে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরবাসী। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও এস এসসি পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি থাকায় টিউওয়েলগুলো পানির নিচে তলিয়ে আছে। এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। অবিলম্বে সাতক্ষীরা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমদ, জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ ও পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌসের নিকট দ্রুত সমাধান চেয়ে জলাবদ্ধতা নিরশনে পানির নিষ্কাশন দাবি করেছেন পৌরবাসী । 

এদিকে মধুমল্লারডাংগির অনেকেই সুপেয় পানির অভাব, সাপের ভয়, রান্না করতে না পারা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায়  আসবাব পত্র নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। 

পৌরসভার সাত নং ওয়ার্ডের ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দাশফিকুল ইসলাম খোকা জানান, ইটাগাছার বিলে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘেরের কারণে পানি খাল দিয়ে নদীতে পড়তে পারছে না।বাইপাস দিয়ে যে স্লুইজ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা প্রলিজমে তার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। 
 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ জানান, অতি বৃষ্টিপাতের কারণে গত বছরের ন্যায় এ বছরও সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য গত বৃহষ্পতিবার ইটাগাছা বিলে গিয়ে ঘের মালিকদের তিন দিনের মধ্যে অবৈধ নেটপাটা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। জলবদ্ধতা নিরশনে সাতক্ষীরা খাল গুলো খনন করা হয়েছে। শহরের প্রাণ সাহেরের খাল, বেদনা নদী ও কুঞ্জুর স্লূইজগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় বিকেলের মধ্যে জলাবদ্ধ এলাকার পানি প্রাণ সায়েরের খাল দিয়ে বেদনা নদীতে পড়ে তা নিষ্কাশন হবে। এ ব্যাপারে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মনির হোসেন জানান, এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন বীজতলা, আউশ ধান ও সবজির ক্ষেত।  সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন বীজতলা, বরবটি, সিম, শসাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কি পরিমাণ ও কত কোটি টাকার ফসল ও কৃষকের ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে কাজ করছে কৃষি বিভাগ ।পানি নামলে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হবে । এর জন্য কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

সর্বশেষ