
ইউক্রেনে সর্বকালের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্রুজ বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বুধবার মধ্যরাতে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে এ হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য জানিয়েছেন।
কিয়েভ থেকে এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠার পর রাজধানীর আকাশে ড্রোনের গুঞ্জন ও একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
এ ছাড়া আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ এই হামলায় খমেলনিতস্কি অঞ্চলে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার এই নতুন হামলা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। গত সপ্তাহের ৫৫০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার রেকর্ড এবার ভেঙে গেছে। জেলেনস্কি এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এমন এক সময় এ হামলা হলো, যখন আমরা শান্তি অর্জন ও যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য এত প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
কেবল রাশিয়াই এসব প্রত্যাখ্যান করে চলেছে।’
অস্ত্র সরবরাহের ওপর গত সপ্তাহের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভে আরো অস্ত্র পাঠানো ঘোষণা দেওয়ার পর রাতে এই হামলা চালানো হয়। তবে মার্কিন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এই স্থগিতাদেশ সম্পর্কে জানতেন না। এ ছাড়া ট্রাম্প মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে তার হতাশাও প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই আমাদের জন্য দারুণ, কিন্তু এটি অর্থহীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’
অন্যদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘মস্কো এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে না। ট্রাম্প সাধারণত যেভাবে কথা বলেন ও যেসব শব্দ ব্যবহার করেন, তা বেশ কর্কশ।’
দুই নেতাই নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু সেটি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য কার্যকর রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত সপ্তাহে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘তিনি (পুতিন) শুধু মানুষ হত্যা চালিয়ে যেতে চান। এটা ভালো নয়।’
ট্রাম্প মঙ্গলবার আরো বলেছিলেন, তিনি রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের একটি নিষেধাজ্ঞা বিল বিবেচনা করছেন, যার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি। তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জুন মাসে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এখন সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে কিয়েভকে সহায়তা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ইউক্রেন ১০টি প্যাট্টিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র পেতে পারে।
রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মোকাবেলায় কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। কিয়েভ ও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। অন্য এলাকাগুলোও হামলার বাইরে থাকছে না।