
সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জিল্লুল হাকিমের দু’টি ভবন ও ৫০ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউন এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা ভবন ও রাজবাড়ীর পাংশায় ৩০ শতাংশ জমির ওপর তিন তলা ভবন রয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ দিন দুদকের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন এ আবেদন করেন।
ওই আবেদনে বলা হয়, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করেছে। তিনি ঢাকা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্তকালে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্তকালে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আসামী তার এসব সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন। এসব সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এ জন্য এসব সম্পদ ক্রোক করা একান্ত আবশ্যক।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি একই আদালত মো. জিল্লুল হাকিম, তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুলের নামে থাকা ২৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত বছরের ১৭ অক্টোবর তাদের তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, তার স্ত্রী সাহিদা হাকিম, ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির অনুসন্ধান করে দুদক।
রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের বিরুদ্ধে গত ২৯ আগস্ট অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন জিল্লুল হাকিম। ৫০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপির কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত টাকা ধার নিয়ে ঋণ পরিশোধ করে ওই নির্বাচনে অংশ নেন এবং নির্বাচিত হন জিল্লুল হাকিম। দুই যুগের ব্যবধানে এখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ (পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি) আসনের সাবেক এমপি জিল্লুল হাকিম কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিশেষ করে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিমসহ পরিবারটি দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে ঢাকার উত্তরা, বনানী ও রাজবাড়ী শহরে বিলাসবহুল বাড়ি ও রাজবাড়ীর তিন উপজেলায় ৫০০ বিঘার বেশি জমির মালিকানা থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙে ১৩ শতাংশ জমি ও উপজেলা সদরে সংখ্যালঘু ২০টি পরিবারের ২০ শতাংশ জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন তিনি। এ ছাড়া বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নে ১২টি সংখ্যালঘু পরিবারের ১০৭ বিঘা জমি দখল করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে লিখে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জিল্লুল হাকিম নিজের নামের পাশাপাশি স্ত্রী-ছেলের নামে-বেনামে রাজবাড়ী ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। একসময় মোটরসাইকেলে চড়ে বেড়ানো সেই জিল্লুল হাকিমের রয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি। নামে-বেনামে রাজবাড়ীতে কিনেছেন দুইশ’ বিঘার বেশি জমি। তার ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল পদ্মা নদীর ৫০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।