
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাঁটা শুরু, শেষটা হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায়। গায়ে পর্বতারোহণের জ্যাকেট, মুখে অক্সিজেন মাস্ক, হাতে লাল-সবুজ পতাকা—এই দৃশ্যেই ধরা দিলেন গাজীপুরের তরুণ ইকরামুল হাসান শাকিল। ১৯ মে ২০২৫ সকাল সাড়ে ছয়টায় এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে জয়গান গাইলেন সাহস, সংগ্রাম আর স্বপ্নের। তিন দিন পর ২২ মে নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি ও অভিজ্ঞতা।
এই অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘সি টু সামিট’। কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে হাঁটা শুরু করেছিলেন ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ২৯ এপ্রিল পৌঁছান এভারেস্ট বেজক্যাম্পে। এরপর ১৬ মে ক্যাম্প–২, ১৭ মে ক্যাম্প–৩, ১৮ মে ক্যাম্প–৪ পার করে অবশেষে ১৯ মে পৌঁছান বিশ্বের সর্বোচ্চ বিন্দুতে—৮,৮৪৮.৮৬ মিটার উঁচু মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে।
শাকিল লেখেন, “এই পথ সহজ ছিল না। প্রতিটি ধাপে ছিল মৃত্যু আর জীবনের সূক্ষ্ম ভারসাম্য। খুম্বু আইসফল, লোৎসে ফেস, সাউথ কল কিংবা হিলারি স্টেপ—সব জায়গাই ছিল একেকটা মানসিক যুদ্ধক্ষেত্র। কৃত্রিম অক্সিজেনে হাঁসফাঁস করে যখন মনে হয়েছে আর সম্ভব না, তখন হৃদয়ে বাজতে থাকা বাংলাদেশের নাম আর ‘সি টু সামিট’-এর অঙ্গীকার আমাকে টেনে নিয়ে গেছে চূড়ার দিকে।”
তিনি ৯০ দিনের মধ্যে এভারেস্ট জয় করার পরিকল্পনা করলেও সফলতা আসে ৮৪তম দিনেই। সফল এই অভিযানে প্রায় ১,৩৭২ কিলোমিটার হেঁটেছেন শাকিল। সারা পথজুড়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা আর সমর্থন ছিল তাঁর সঙ্গী।
শাকিল বলেন, “এই জয় শুধু আমার নয়, এ দেশের মানুষ, তরুণ প্রজন্ম, আর সেইসব স্বপ্নবাজদের যারা ‘অসম্ভব’ শব্দকে হার মানাতে চায়—তাদের সবার। সাহস, পরিশ্রম আর দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কোনো স্বপ্নই দূর থেকে যায় না।”
৩৫ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি–স্নেপের ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শাকিলও দেশের সমুদ্র থেকে শুরু করে ছুঁলেন পৃথিবীর শিখর। এভারেস্ট চূড়া জয় করে সেদিনই ক্যাম্প–২-এ ফিরে রাত কাটান তিনি। ২০ মে নেমে আসেন বেজক্যাম্পে এবং বর্তমানে নিচের দিকে নেমে বিশ্রাম নিচ্ছেন অভিযানের ধকল কাটিয়ে উঠতে।
শাকিলের এই অভিযান শুধু একটি পর্বতারোহণ নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক অনুপ্রেরণার গল্প। দেশের তরুণদের সামনে খুলে দিয়েছে সাহস ও স্বপ্নের নতুন দিগন্ত।