শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে মারাত্মক হিসাব সংক্রান্ত অসঙ্গতি, আন্তর্জাতিক হিসাব মান লঙ্ঘন এবং করপোরেট সুশাসনের গুরুতর দুর্বলতা ধরা পড়েছে। নিরীক্ষকদের পর্যবেক্ষণে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
নিরীক্ষকদের মতে, সবচেয়ে গুরুতর অনিয়মটি পাওয়া গেছে কোম্পানির ‘ওয়ার্ক-ইন-প্রসেস’ বা নির্মাণাধীন পণ্যের মজুত হিসাবে। কোম্পানি প্রায় ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার পাইপ নির্মাণাধীন মজুত দেখালেও নিরীক্ষার সময় ওই মজুতের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃত উৎপাদন ও হিসাবভুক্ত উৎপাদনের নেতিবাচক পার্থক্যকে উৎপাদনজনিত ক্ষতি হিসেবে দেখানোর পরিবর্তে ভুলভাবে সম্পদ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে কোম্পানির সম্পদ ও সংরক্ষিত আয় কৃত্রিমভাবে বেশি দেখানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ন্যাশনাল টিউবস সর্বশেষ ২০১২ সালে স্থায়ী সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করেছিল। গত ১২ বছরে কোনো পুনর্মূল্যায়ন না করা আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে সম্পদের অবচয় নির্ধারণেও আধুনিক ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি কোম্পানির কোনো কার্যকর অ্যাসেট ট্যাগিং সিস্টেম বা পূর্ণাঙ্গ ফিক্সড অ্যাসেট রেজিস্টার নেই, যার ফলে সম্পদের বাস্তব অস্তিত্ব যাচাই করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আর্থিক বিবরণীতে কর সংক্রান্ত বড় অসঙ্গতিও উঠে এসেছে। কোম্পানিটি ৪৩১ কোটি টাকা অগ্রিম আয়কর দেখালেও কর সঞ্চিতি রয়েছে মাত্র ৯৮ কোটি টাকা। ফলে বাকি ৩৩৩ কোটি টাকার আদায়যোগ্যতা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি শ্রম আইন লঙ্ঘন করে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা নির্ধারিত ট্রাস্টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়নি। গ্র্যাচুইটি স্কিম ও লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিএসইসির বিধি মানার ক্ষেত্রেও গুরুতর অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন নিরীক্ষকরা।
আর্থিক পারফরম্যান্সের দিক থেকেও কোম্পানিটির অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। ২০২৫ সালের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ন্যাশনাল টিউবসের বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪৩ লাখ টাকা, বিপরীতে নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭৭ পয়সা। বিক্রি কমে যাওয়া ও পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় নগদ প্রবাহও নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতেও কোম্পানির বোর্ড ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখার একটি কৌশল বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৬২ টাকা ৫০ পয়সা।
























