ঢাকা   বুধবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ৫৭ হাজার কোটি টাকার লোকসান

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ৫৭ হাজার কোটি টাকার লোকসান

দেশের ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন আর্থিক বিপর্যয়ের চিত্র সামনে এনেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটি ৫৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বিশাল লোকসান দেখিয়েছে, যা শেয়ারহোল্ডার ও বাজার বিশ্লেষকদের রীতিমতো স্তব্ধ করে দিয়েছে। সংশোধিত এই লোকসানের অঙ্ক আগের ঘোষণার তুলনায় বহুগুণ বেশি এবং শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি দেশের ইতিহাসে কোনো একক ব্যাংকের ঘোষিত সবচেয়ে বড় লোকসান হতে পারে।

রোববার শেয়ারবাজারে দাখিল করা এক বিবৃতিতে ব্যাংকটি জানায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এটি গত বছরের একই সময়ের ঘোষিত মুনাফার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। সর্বশেষ এই আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সতর্কতামূলক বক্তব্যের সঙ্গেও মিলেছে, যেখানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকের নিট সম্পদ মূল্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।

এই প্রকাশনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকটির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে কার্যত অন্ধকারে ছিলেন। কারণ এর আগে ব্যাংকটি নয় মাসে মাত্র ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা লোকসানের তথ্য দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নির্দেশনার পর প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংক সূত্র জানায়, ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক চিঠির মাধ্যমে ডেফারেল সুবিধা বাতিল করা হয়, যার আওতায় ঘাটতি প্রভিশন সমন্বয় না করেই আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের সুযোগ ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দেয়, ২০২৫ অর্থবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক থেকে শুরু করে প্রভিশন সমন্বয় করেই হিসাব প্রস্তুত করতে হবে। এর ফলেই ব্যাংকের প্রকৃত লোকসানের ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৩২৮ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছিল। অথচ সাম্প্রতিক এই লোকসানের ধাক্কায় ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য নেমে এসেছে নেতিবাচক ৪৬০ টাকা ১৮ পয়সায়, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের ধস নামিয়েছে।

এই আর্থিক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডকে অকার্যকর ঘোষণা করে এবং একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার আগে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ মোট পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এই একীভূতকরণে যুক্ত রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। উল্লেখযোগ্য অনাদায়ী ঋণ, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, এসব সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের মূলধনের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। বৃহত্তর ব্যাংকিং খাতকে রক্ষার স্বার্থেই একীভূতকরণ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।