ঢাকা   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে নতুন প্রস্তাব

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৫ জুলাই ২০২৫

সর্বশেষ

বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে নতুন প্রস্তাব

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ২০২৫ এর খসড়ায় উল্লিখিত একটি বড় সংস্কারের অংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ১০ জুলাই জনমত জানতে এই খসড়াটি প্রকাশ করেছে।

প্রস্তাবিত এই আইনটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-কে একত্রিত করে আধুনিকীকরণ ও নিয়ন্ত্রক তদারকিকে সুবিন্যস্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের একজন সদস্য এ বিষয়ে বলেন, টাস্কফোর্স প্রাথমিকভাবে একটি সার্চ কমিটি এবং একটি স্বাধীন তদারকি সংস্থা উভয়ই গঠনের প্রস্তাব করেছিল, যাতে নিয়ন্ত্রক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ রোধ করা যায়। তিনি বলেন, "খসড়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটির বিধানটি রেখেছে। তবে তদারকি সংস্থার প্রস্তাবটি উপেক্ষা করেছে।" টাস্কফোর্স বিশ্বাস করে, মন্ত্রণালয় এবং কমিশনের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এমন একটি সংস্থা অপরিহার্য।

খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, বিএসইসি চেয়ারম্যান এবং চারজন কমিশনারের পদের জন্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য একটি চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির প্রধান হবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হবেন। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন কম্পোট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিব, যিনি কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনার নিয়োগের সময় বিএসইসির চেয়ারম্যানও সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। সার্চ কমিটি চেয়ারম্যান এবং প্রতিটি কমিশনার পদের জন্য আগ্রহী আবেদনকারীদের মধ্য থেকে দুজন করে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে, যার ভিত্তিতে সরকার চূড়ান্ত নিয়োগ দেবে।

একটি নেতৃস্থানীয় ব্রোকারেজ ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "গত এক দশকে বিএসইসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগগুলো সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে, যেখানে প্রায়শই অযোগ্য এবং অদক্ষ ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন।" তিনি বলেন, "এরফলে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা এতটাই কমে গেছে, শেয়ারবাজার অর্থায়নের একটি বিকল্প উৎস হিসেবে আবির্ভূত হতে ব্যর্থ হয়েছে।" তিনি বলেন, যদি সার্চ কমিটির মাধ্যমে সঠিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।

এদিকে, খসড়া প্রস্তাবে শেয়ার কারসাজিকারীদের জন্য জরিমানাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, লঙ্ঘনকারীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। নতুন খসড়ায় সর্বোচ্চ জরিমানা ১০ লাখ টাকায় দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং কারাদণ্ডের মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়াও, এটি বাজার-সম্পর্কিত মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের বিষয়টি সমাধান করেছে, যেখানে মামলাগুলো সরাসরি শেয়ারবাজারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, এই ধরনের মামলাগুলো নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে যেতে হয়, যা প্রায়শই মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা সৃষ্টি করে।

খসড়ায় ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর কাছে থাকা বিনিয়োগকারীদের তহবিল দেউলিয়া হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সুরক্ষার একটি বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়ায় ব্রোকারেজ ফার্ম, তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং নিরীক্ষকদের মধ্যে জবাবদিহিতার উপর অধিক জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্পোরেট সুশাসনের প্রয়োজনীয়তাও শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বশেষ