ঢাকা   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে দশ দেশের বিদেশি বিনিয়োগ: ৪ খাতে সর্বোচ্চ ঝোঁক

শেয়ারবাজার

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:৪৩, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

শেয়ারবাজারে দশ দেশের বিদেশি বিনিয়োগ: ৪ খাতে সর্বোচ্চ ঝোঁক

শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটার টান: ১০ দেশনির্ভর বিনিয়োগে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, বিনিয়োগ বেড়েছে ইউএই-সহ কয়েকটি দেশ

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এখন মাত্র ১০টি দেশের উপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কানাডা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, কেম্যান আইল্যান্ডস, মরিশাস ও কুয়েত।

২০২৩–২৪ অর্থবছরে এ ১০টি দেশ থেকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (১২০ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে)।

বিনিয়োগের ধরণ

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মূলত দুই ধরনের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ করেন:
১. ইকুইটি সিকিউরিটিজ: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ, যেখানে লভ্যাংশ পাওয়া যায়।
২. ডেবট সিকিউরিটিজ: বিল, বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ, যা নির্দিষ্ট হারে সুদ দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ইকুইটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ ছিল ৮২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৯ কোটি ডলার কমেছে। এর মধ্যে ৮০ কোটি ডলার এসেছে শুধুমাত্র ১০টি দেশ থেকে।

শীর্ষ দেশগুলোতে বিনিয়োগের হ্রাস-বৃদ্ধি

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশিরভাগ দেশের বিনিয়োগ কমেছে।

  • যুক্তরাষ্ট্র: বিনিয়োগ ২৬ কোটি ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ডলারে
  • যুক্তরাজ্য: প্রায় ১ কোটি ডলার কমেছে।
  • সিঙ্গাপুর: বিনিয়োগে হ্রাস দেড় কোটি ডলার
  • লুক্সেমবার্গ: ৮ কোটি ডলার হ্রাস।
  • ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস: বিনিয়োগ কমেছে সোয়া ২ কোটি ডলার।

অন্যদিকে, কিছু দেশের বিনিয়োগ বেড়েছে।

  • সংযুক্ত আরব আমিরাত: বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ডলারে (পূর্বে ৩ কোটি ডলার)।
  • কানাডা: প্রায় ১০ লাখ ডলার বেড়ে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে সোয়া ৪ কোটি ডলারে
  • কেম্যান আইল্যান্ডস: সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে বিনিয়োগ হয়েছে দেড় কোটি ডলার

খাতভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ

বিদেশি বিনিয়োগের সিংহভাগ ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতে, যেখানে মোট বিনিয়োগ ছিল ৩৫ কোটি ডলার (৪২.৫ শতাংশ)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ছিল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতে, যার পরিমাণ ২৩ কোটি ডলার (২৮ শতাংশ)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে খাদ্য খাত, যেখানে বিনিয়োগ ছিল ১২ কোটি ডলার (১৪.৫ শতাংশ)।

ধারাবাহিক হ্রাস পাচ্ছে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত তিন অর্থবছরে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ক্রমাগত কমছে:

  • ২০২১–২২: ২৯৫ কোটি ডলার (৩৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা)।
  • ২০২২–২৩: ২৩৩ কোটি ডলার (২৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা)।
  • ২০২৩–২৪: ১৭৩ কোটি ডলার (২০ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা)।

হ্রাসের কারণ

ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি মূল কারণ বিদেশি বিনিয়োগ কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে:
১. ফ্লোর প্রাইস: শেয়ারের মূল্যস্তর নির্ধারণের কারণে লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
২. টাকার অবমূল্যায়ন: ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনে বিনিয়োগকারীরা দ্বিগুণ ক্ষতির সম্মুখীন হন।
৩. অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা: বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ডলারের দামের অস্থিরতা বিদেশি বিনিয়োগ কমার মূল কারণ। এছাড়া, লুক্সেমবার্গ, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস বা মরিশাসের মতো জায়গা থেকে যে বিনিয়োগ আসে, তার বড় অংশই পাচার হওয়া অর্থের ফেরত আসা।’

উপসংহার

বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ধরে রাখতে শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মুদ্রার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি। ফ্লোর প্রাইসের মতো কৃত্রিম বাধা সরিয়ে একটি মুক্ত বাজার কাঠামো তৈরি করা গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আবার বাড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ার বিজনেস24.কম

সর্বশেষ