ঢাকা   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

নতুন শেয়ার না ছেড়ে আরো ২ কোম্পানি বাজারে আনবে ওয়ালটন

শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৫ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ২০:৫৮, ১৫ অক্টোবর ২০২০

নতুন শেয়ার না ছেড়ে আরো ২ কোম্পানি বাজারে আনবে ওয়ালটন

নতুন করে আর শেয়ার ছাড়তে হবে না ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে। পুঁজিবাজারে ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার না বাড়ানো নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের।

 

গত মঙ্গলবার এসইসির সঙ্গে ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে এমন সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম।

 

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মাত্র এক শতাংশেরও কম শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইলেকট্রনিক খাতের দেশীয় জায়ান্ট ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতেই উচ্চ আয়ের কোম্পানিটির শেয়ারের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ফলস্বরূপ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে ওয়ালটনের শেয়ার দর। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হলে কোম্পানিটির ওপর ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়ানোর চাপ তৈরি হয়। তবে সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের লোকসানের বিষয়টি বিবেচনা করে ওয়ালটনের নতুন শেয়ার ইস্যুর প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে এসইসি। 

 

গত মঙ্গলবার ওয়ালটনের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে আরও শেয়ার ইস্যুর বিষয়টিতে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে এসইসি। অর্থাৎ ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে পুঁজিবাজারে নতুন করে শেয়ার ছাড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উদয় হাকিম। অবশ্য এই ছাড়ের বিপরীতে ওয়ালটন গ্রুপ আরও দুটি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সম্মত হয়েছে, যেখানে ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার পর্যাপ্ত থাকবে বলে জানা গেছে।

 

উদয় হাকিম বলেন, ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম গত (মঙ্গলবার) কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন। সেখানে এসইসির পক্ষ থেকে ওয়ালটনের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন নতুন করে শেয়ার ইস্যু করলে দর আরও কমে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যেটা আমরা চাই না। বিষয়টিতে কমিশনও একমত পোষণ করে জানান যে, তারাও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হোক সেটা চান না। তবে এর বিপরীতে এসইসির পক্ষ থেকে ওয়ালটন গ্রুপের আরও দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয় জানিয়ে উদয় হাকিম বলেন, ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ কমিশনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। এর অংশ হিসেবে ওয়ালটন গ্রুপের ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ওয়ালটন প্লাজার পর্যাপ্ত ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওয়ালটন। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানিটির শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সর্বনিম্ন ৩১৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকা দর প্রস্তাব করে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নির্দেশক মূল্য (কাট-অব-প্রাইস) ৩১৫ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ছাড়ে ২৫২ টাকা দরে লটারিতে বরাদ্দ পান। এর ফলে ১০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করতে গিয়ে মাত্র ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার ইস্যু করতে হয়েছে, যা কোম্পানির মোট শেয়ারের মাত্র শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ।

 

স্বল্প সংখ্যক ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার থাকায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর লেনদেন শুরুর প্রথম সাত কার্যদিবসে ওয়ালটনের শেয়ারের সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধির পরও সেকেন্ডারি বাজারের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে পারেননি। মাত্র সাত দিনেই শেয়ার দর তিন গুন বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সমালোচনা তৈরি হলে ওয়ালটনসহ যেসব কোম্পানির যেসব কোম্পানির ১০ শতাংশের কম ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার রয়েছে, সেসব কোম্পানির ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়াতে এসইসির ওপর চাপ তৈরি হয়।

 

এসইসিও উদ্যোগ নেয়, যদিও তা একেবারেই প্রাইমারি স্টেজে রয়ে যায়। তবে এসইসির উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি পুঁজিবাজারে ছড়িয়ে পড়লে ওয়ালটনের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। টানা নয় কার্যদিবস সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধির পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার কেনার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে দরে উল্টো চিত্র দেখা যায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার মূলত ৯৪০ থেকে ১ হাজার ৯ টাকায় কেনার সুযোগ পান। এ সময়ে প্রায় ১৭ লাখ শেয়ার কেনেন তারা। তবে ওয়ালটনের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়াতে এসইসির পদক্ষেপের বিষয়টি বাজারে ছড়িয়ে পড়লে গত চার কার্যদিবসে প্রায় ২৪ শতাংশ দর হারিয়ে ৭৬৭ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো বিনিয়োগকারী আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন বলে জানা যায়। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে কমিশন ওয়ালটনের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বাড়ানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে আসলো।

শেয়ার বিজনেস24.কম