
বয়স মাত্র ১৭, কিন্তু দেখতে মনে হচ্ছিল আরও কম। বার্সেলোনা ও ভিসেল কোবের অন্য ফুটবলারদের ভিড়ে তাঁকে নিতান্ত শিশুর মতো দেখাচ্ছিল। ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে শরীরে আঘাত পেতে পারেন, সেই দুশ্চিন্তাও হতে পারে। কিন্তু কিছু সময় খেলা দেখার পর নিজের ভুলটা ভাঙে। বয়স যত কমই হোক কিংবা দেখতে যত ছোটই লাগুক, পেদ্রো ফার্নান্দেজ সারমিনেতোর পায়ে বল গেলেই যেন অন্য রকম এক মানুষ। মানসিক পরিপক্বতায় অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকা কেউ!
বার্সেলোনার খেলোয়াড় তৈরি আঁতুড়ঘর লা মাসিয়া নিয়মিতই ফুটবল বিশ্বকে নতুন নতুন খেলোয়াড় উপহার দিয়ে চলেছে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসা সর্বশেষ বড় তারকা লামিনে ইয়ামাল। বয়স ১৭ পেরোনোর আগেই যাঁর নামের পাশে যুক্ত হয়েছে অসামান্য সব সাফল্য।
এবার সেই ইয়ামালের পথ ধরেই এবার আবির্ভূত হতে চলেছেন পেদ্রো ফার্নান্দেজ, যাঁকে আদর করে সবাই ডাকেন দ্রো ফার্নান্দেজ বলে। আগামী দিনে হয়তো এই নামেই নিজেকে চেনাবেন তিনি। তবে এই নামের পেছনেও আছে মজার গল্প।
‘পেদ্রো’ নামের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ‘দ্রো’—এই নামে ডাকতেন তাঁর ভাই। পরিবারের আপত্তি ছিল না; কারণ, এভাবে তাঁর বাবার নাম থেকে তাঁকে আলাদা করা যায়। বাবার নামও ছিল পেদ্রো। কিন্তু ভাইয়ের দেওয়া নামটা তাঁর সঙ্গে বার্সেলোনায়ও দারুণভাবে মানিয়ে গেছে। কারণ, একই সময়ে বার্সায় আরও দুজন ‘পেদ্রো’ নামের খেলোয়াড় ছিলেন। একজন হচ্ছেন পেদ্রো ভিয়া (১৭) আর অন্যজন পেদ্রো রদ্রিগেজ (১৭)। দ্রো নামটা তাঁকে এ দুজনের চেয়েও আলাদা করেছে।
গতকাল প্রাক্–মৌসুম প্রস্তুতিতে জাপানি ক্লাব ভিসেল কোবের বিপক্ষে ৭৯ মিনিটে মার্কাস রাশফোর্ডের বদলে দ্রোকে মাঠে নামান বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক। মাঠে নামার ৮ মিনিট পর নিজের প্রথম গোলও করেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন দ্রো।
শুধু গোল করে নয়, যেটুকু সময় মাঠে ছিলেন নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন এই কিশোর। নিখুঁত পাসিং, গতিময়তা, ওয়ান টাচ এবং ড্রিবলিং জাদুতে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। এই ম্যাচে যদি শেষ পর্যন্ত গোল যদি না–ও পেতেন, তবু দ্রোকে আলাদা করে চেনানোর প্রয়োজন হতো না। অল্প সময়ের মধ্যে ‘আগামী দিনের তারকা’ খেতাবটাও নিজের করে নিয়েছেন দ্রো। এমনকি কেউ কেউ তাঁর খেলায় বার্সেলোনা ও স্পেন কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ছায়াও দেখতে পেতে শুরু করেছেন।
গ্যালিসিয়ান বাবা এবং ফিলিপিনো মায়ের সন্তান দ্রোর জন্ম ২০০৮ সালে নিগরান শহরে। এরপর প্রতিভার জোরে একপর্যায়ে ঠাঁই করে নেন লা মাসিয়াতে। সেখানেই নিজের প্রতিভা ও মেধার বিকাশ ঘটান এই কিশোর। আর ফ্লিকের হাত ধরে গতকাল মূল দলের হয়ে মাঠেও নেমে গেলেন তিনি। দ্রো মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও তাঁকে ফরোয়ার্ড, লেফট উইংগার এবং ফলস নাইন হিসেবেও খেলতে পারেন। এককথায় দ্রো রীতিমতো বৈচিত্র্যময়তার আধার।
বার্সার মূল দলের হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলার অনুভূতি জানিয়ে দ্রো বলেছেন, ‘আমি একটু স্নায়ু চাপে ভুগছিলাম। কিন্তু প্রথম সুযোগ পেয়েই গোল করতে পেরেছি। বিশ্বের সেরা ক্লাবের হয়ে এটি আমার প্রথম ম্যাচ, তাই খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। হান্সির (ফ্লিক) সঙ্গে কথা বলার পর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে ভরসা দিয়েছে ও সাহস জুগিয়েছে।’
বার্সার সঙ্গে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি দ্রোর। তবে কাতালান ক্লাবটি এরই মধ্যে তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। ফ্লিকের পাশাপাশি ক্লাবের অন্যরাও দ্রোর প্রতিভায় মুগ্ধ। এখন যেকোনো মূল্যে তাঁকে ধরে রেখে লম্বা সময়ের জন্য কাজে লাগাতে চায় ক্লাবটি।