
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ‘মোটা জেনারেল’ এবং বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে কয়েক দশক ধরে সামরিক বাহিনীর অধঃপতন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কমান্ডারদের এক বিরল সমাবেশে তিনি বলেন, যাঁরা তাঁর কর্মসূচিকে সমর্থন করেন না, তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।
হেগসেথের সঙ্গে মার্কিন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সমাবেশে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিও ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোতে সমবেত অ্যাডমিরাল এবং জেনারেলদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি মার্কিন শহরগুলোতে সেনা মোতায়েনকে ‘আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার ধারণা দেন।
ফক্স নিউজের সাবেক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হেগসেথ এবং সাবেক রিয়েলিটি টিভি তারকা ট্রাম্পের এ মন্তব্য একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মতো মনে হয়েছে। কারণ, গত সপ্তাহে হঠাৎই এই সমাবেশের জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করা হয়েছিল।
হেগসেথ অনুষ্ঠান শুরু করে বলেন, ‘নির্বোধ ও বেপরোয়া রাজনৈতিক নেতারা ভুল পথে পরিচালনা করায় আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা ‘ওউক ডিপার্টমেন্ট’ (অতিমাত্রায় প্রগতিশীল বিভাগ) হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আর নয়।’
সারা বিশ্ব থেকে উড়ে আসা শীর্ষ কর্মকর্তায় ভরা মিলনায়তনে ভাষণ দেওয়ার সময় হেগসেথ তাঁর মাধ্যমে ফ্ল্যাগ কর্মকর্তাদের যাঁরা বরখাস্ত হয়েছেন, সেই সেটিকে সমর্থন করেন। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ শীর্ষ মার্কিন জেনারেল এবং নৌবাহিনীর শীর্ষ অ্যাডমিরাল, যিনি একজন নারী। তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তাকে তিনি অব্যাহতি দিয়েছেন, তাঁরা একটি ভেঙে পড়া সংস্কৃতির অংশ ছিলেন।
হেগসেথ পেন্টাগন যেভাবে বৈষম্যের অভিযোগ ও অন্যায়ের তদন্ত পরিচালনা করছে, তাতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘ডিমের খোসার ওপর দিয়ে হাঁটার মতো’ সতর্ক থাকতে হয়।
হেগসেথ বলেন, ‘আজ আমার কথাগুলো যদি আপনাদের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তোলে, তবে আপনাদের সম্মানজনকভাবে পদত্যাগ করা উচিত। আমি জানি, আপনাদের বেশির ভাগই এর বিপরীত অনুভব করছেন। এ কথা আপনাদের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করে তুলেছে।’
হেগসেথ বলেন, পেন্টাগনের করিডরে মোটা জেনারেল ও অ্যাডমিরালদের দেখা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। সব ফিটনেস পরীক্ষা শুধু পুরুষদের মানদণ্ডে নির্ধারণ করা হবে। তিনি সাজসজ্জার মানদণ্ডের ওপরও জোর দেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, অপেশাদার চেহারার যুগ শেষ। আর শ্মশ্রুমণ্ডিত থাকা চলবে না।
হেগসেথ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন দর্শক সারিতে মার্কিন জেনারেলরা নীরবে বসেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের অনুষ্ঠানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এর মাধ্যমে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে গভীরভাবে দলীয় রাজনীতির মধ্যে টেনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিনেটের সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য জ্যাক রিড বলেন, এমন সমাবেশ ইঙ্গিত দেয় যে যোগ্যতা, বিচারবুদ্ধি বা সংবিধানের প্রতি সেবার চেয়ে দলীয় আনুগত্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একটি পেশাদার, নির্দলীয় সামরিক বাহিনীর নীতিকে ক্ষুণ্ণ করে।
আমি আপনাদের পাশে আছি: কমান্ডারদের উদ্দেশে ট্রাম্প
হোয়াইট হাউস থেকে অনুষ্ঠানের জন্য রওনা হওয়ার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের পছন্দ না হলে তিনি সামরিক নেতাদের বরখাস্ত করবেন।
ট্রাম্প সমাবেশে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বক্তব্য দেন। তিনি কমান্ডারদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার কথা পছন্দ না হলে, আপনারা হলরুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন। অবশ্যই তাতে আপনাদের পদমর্যাদা ও ভবিষ্যৎ—দুটিই চলে যাবে।’
হেগসেথের মতো বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগের বিরোধিতা করে ট্রাম্প বলেন, ‘যোগ্যতা। সবকিছুই যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে হবে... রাজনৈতিক কারণে কেউ আপনার জায়গা নেবে না।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি আপনাদের সমর্থন করি ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি শতভাগ আপনাদের পাশে আছি।’
ট্রাম্প যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অভিব্যক্তিহীন মুখে বসেছিলেন। ট্রাম্পের সাধারণ সমাবেশের ভিড়ের চেয়ে হলরুম অনেক বেশি শান্ত ছিল।
এই অনুষ্ঠানের জন্য কত অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের শাটডাউনের ঠিক আগে, হেগসেথ সারা বিশ্ব থেকে সামরিক কর্মকর্তাদের এই সমাবেশে আসার নির্দেশ দেন।
প্রতিরক্ষা নীতির সংস্কার
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর গত আট মাসে পেন্টাগনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা, একাডেমি গ্রন্থাগারগুলো থেকে বই নিষিদ্ধ করা এবং ভেনেজুয়েলার উপকূলে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকার ওপর প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেওয়া।
এই মাসে ট্রাম্প প্রতিরক্ষা দপ্তরের নাম পরিবর্তন করে ‘যুদ্ধ দপ্তর’ রাখতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
সপ্তাহান্তে ট্রাম্প ওরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ডে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই বছরের শুরুতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা পাঠিয়েছিলেন। তিনি শিকাগোতে সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে বলেন, তিনি হেগসেথকে বলেছেন, ‘আমাদের এই বিপজ্জনক শহরগুলোর কয়েকটিকে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।’
ট্রাম্প স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। তবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরেই যুদ্ধের শিকার। তিনি এ জন্য অবৈধ অভিবাসীদের দায়ী করেন, যাঁদের তাঁর প্রশাসন দেশ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরেই আক্রমণের শিকার। এটি বিদেশি শত্রুর আক্রমণের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। বরং অনেক দিক থেকে আরও কঠিন। কারণ, তাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইলিনয়ের ডেমোক্র্যাট গভর্নর জেবি প্রিৎজকার। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সহকর্মী মার্কিনদের শত্রু ভাবে, তাদের ‘নির্মূল করার’ কথা বলে, তিনি দেশ শাসনের যোগ্য নয়।’