ঢাকা   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

দলের শীর্ষ অস্বস্তি নিয়ে ভাবছেন না মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি

দলের শীর্ষ অস্বস্তি নিয়ে ভাবছেন না মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি গতকাল রোববার তাঁর ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিজম’ বা ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’-এর পক্ষে কথা বলেছেন। জোহরানের দাবি, তিনি অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা পুরো ডেমোক্রেটিক পার্টির আদর্শ হওয়া উচিত।

গতকাল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বামঘেঁষা জোহরান এ কথা বলেন। যদিও ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা এখনো জোহরানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না।

এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জোহরান বলেন, নিউইয়র্কের শীর্ষ ধনী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর কর বাড়ানোর যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন, তা একদিকে যেমন বাস্তবসম্মত, তেমনি শহরের শ্রমজীবী মানুষের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিনা মূল্যে বাস সেবা, ঘণ্টায় ৩০ ডলার ন্যূনতম মজুরি দেওয়া এবং ভাড়া স্থিতিশীল রাখা।

জোহরান বলেন, এটা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী দেশের সবচেয়ে ধনী শহর। অথচ প্রতি চারজন নিউইয়র্কবাসীর একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন। আর বাকিরা একধরনের দুশ্চিন্তার জালে আটকে আছেন।

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাই পর্বের ভোট হয়। নিউইয়র্ক নগরের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি সাবেক ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে বড় জয় পেয়েছেন।

জোহরানের জয়ের পর ডেমোক্র্যাট দলের একাংশের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকে মনে করছেন, জোহরানের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের চিন্তাধারা রিপাবলিকানদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিতে পারে। এতে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটদের ‘অতি বামপন্থী’ হিসেবে আক্রমণ করার সুযোগ পাবে রিপাবলিকানরা।

জোহরানের অর্থনৈতিক নীতিগুলো নিয়ে ব্যবসায়ী মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা পরাজিত হয়। রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের দুই অংশই এখন রিপাবলিকানদের দখলে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা এখনো ঠিক হালচাল বুঝে উঠতে পারছে না।

রয়টার্স ও ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাট সদস্য মনে করেন, দলে নতুন নেতৃত্ব দরকার এবং দলের উচিত এখন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।

গতকাল সকালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক দলের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস এবিসির ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি এখনই জোহরানকে সমর্থন দিচ্ছেন না। জোহরানের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি আরও বিস্তারিত জানতে চান।

এ ছাড়া ডেমোক্র্যাট পার্টির নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল, সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাট নেতাও এখন পর্যন্ত জোহরান মামদানিকে সমর্থন দেননি।

নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজের ‘সানডে মর্নিং ফিউচারস উইথ মারিয়া বার্টিরোমো’ অনুষ্ঠানে বলেন, জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁকে ঠিকঠাকমতো চলতে হবে। না হলে নিউইয়র্ক শহরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল বন্ধ হয়ে যাবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তিনি (জোহরান) একজন কমিউনিস্ট। আমি মনে করি, এটা নিউইয়র্কের জন্য খুব খারাপ।’

কমিউনিস্ট বলার ব্যাপারে এনবিসির পক্ষ থেকে জোহরানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়।

জোহরানের অভিযোগ, শ্রমজীবী মানুষের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তিনি যে প্রচার চালাচ্ছেন, সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে প্রেসিডেন্ট এসব বলছেন।

জেফ্রি ও অন্য ডেমোক্র্যাট নেতাদের সমর্থন না পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বলে জানান জোহরান।

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে জোহরানের সরাসরি সমালোচনা তাঁকে অনেক মূলধারার ডেমোক্র্যাট নেতার থেকে আলাদা করে তুলেছে। এই অবস্থানের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও তিনি সে অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন।


চলতি মাসের শুরুর দিকে ‘দ্য বুলওয়ার্ক’ নামের এক রাজনৈতিক পডকাস্টে জোহরানকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি ‘ইন্তিফাদার আন্তর্জাতিককরণ হোক’, এমন ফিলিস্তিনপন্থী স্লোগানের নিন্দা জানাবেন কি না। অনেক ইহুদি এই স্লোগানকে ইহুদিবিদ্বেষী ও সহিংসতার আহ্বান হিসেবে দেখেন। তবে তিনি এ নিয়ে নিন্দা জানাতে রাজি হননি।

এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাকিম জেফ্রিস বলেন, জোহরানকে এই স্লোগান নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে, যেন নিউইয়র্কের ইহুদি ভোটাররা আশ্বস্ত হতে পারেন।

গতকাল আবারও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জোহরান মামদানি বলেন, এ ধরনের ভাষা তিনি ব্যবহার করেন না। তবে এবারও তিনি স্লোগানটির সরাসরি নিন্দা করেননি।

জোহরান বলেন, অন্যরা কী বলবে, সেটা তিনি ঠিক করে দিতে চান না। তাঁর অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীদের মুখ বন্ধ করতে গিয়ে সেটাই করেছেন।

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির পাশাপাশি রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন কার্টিস স্লিওয়া। তিনি গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলসের প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া আইনজীবী জিম ওয়াল্ডেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।