ঢাকা   মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

সোনার পর রুপাতেও ইতিহাস, আউন্সপ্রতি দাম ছুঁল ৬০ ডলার

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সর্বশেষ

সোনার পর রুপাতেও ইতিহাস, আউন্সপ্রতি দাম ছুঁল ৬০ ডলার

বিশ্ববাজারে সোনার পর এবার রুপার দামেও দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন উত্থান। মূল্যবান এই ধাতুটি ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি কেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তের আগেই রুপার দাম রেকর্ড স্পর্শ করে, যা বাজারে বাড়তি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ৯ ডিসেম্বর স্পট মার্কেটে রুপার দাম প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি ৬০ ডলারে উঠে যায়। স্পট মার্কেট এমন একটি বাজার, যেখানে তাৎক্ষণিক ডেলিভারির ভিত্তিতে মূল্যবান ধাতুর কেনাবেচা হয়। বিনিয়োগকারীদের বাড়তি চাহিদা ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রভাবেই এই রেকর্ড মূল্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রুপার পাশাপাশি চলতি সপ্তাহে সোনার দামও ঊর্ধ্বমুখী ছিল। চলতি বছরের শুরুতেই সোনা একের পর এক রেকর্ড গড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করেছে, যার সুফল পেয়েছে সোনা ও রুপা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত সুদহার কমলে এবং মার্কিন ডলারের মান দুর্বল হলে বিনিয়োগকারীরা মূল্যবান ধাতুতে বিনিয়োগ বাড়ান। এই প্রেক্ষাপটে ১০ ডিসেম্বর ফেডারেল রিজার্ভ নীতিসুদহার ০.২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা রুপা ও সোনার দামে আরও গতি এনেছে।

সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইয়েও হি চুয়া জানান, সুদহার কমলে ব্যাংকে আমানত বা স্বল্পমেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগের আকর্ষণ কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সঞ্চয় হিসেবে রুপার মতো সম্পদের দিকে ঝোঁকেন, যা স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়িয়ে দেয়।

গত কয়েক মাসে সোনার দাম প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি ব্যাংকের বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ওংয়ের মতে, সোনার এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব রুপার বাজারেও পড়েছে। তুলনামূলক কম দামে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী রুপার দিকে ঝুঁকছেন।

চলতি বছরে সোনার দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর পেছনে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় পরিসরে সোনা কেনা অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে প্ল্যাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও উল্লেখযোগ্য ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, যা সামগ্রিকভাবে মূল্যবান ধাতুর বাজারকে চাঙা করেছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, রুপার দাম বাড়ার পেছনে শিল্প খাতের চাহিদা বড় ভূমিকা রাখছে। সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কসমস মারিনাকিস জানান, রুপা এখন শুধু বিনিয়োগযোগ্য ধাতু নয়, শিল্প উৎপাদনের জন্যও অপরিহার্য কাঁচামাল। বিদ্যুৎ পরিবহণে রুপা সোনা ও তামার চেয়েও কার্যকর হওয়ায় এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সৌর প্যানেল উৎপাদনে রুপার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভবিষ্যতে ইভি বাজার আরও সম্প্রসারিত হলে ব্যাটারি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরিতে রুপার চাহিদা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সরবরাহ দ্রুত বাড়ানো কঠিন, কারণ রুপা মূলত সিসা, তামা ও সোনা খনির উপজাত হিসেবেই উৎপাদিত হয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের আশঙ্কাও রুপার দামে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অংশ হিসেবে রুপার ওপর শুল্ক আরোপ হতে পারে—এমন আশঙ্কায় আগেভাগেই যুক্তরাষ্ট্রে রুপা মজুত করা হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিচ্ছে এবং দাম আরও চড়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগ ও শিল্প—উভয় খাতের চাহিদা একসঙ্গে বাড়তে থাকায় আগামী কয়েক মাসেও রুপার দাম উচ্চ পর্যায়েই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ