ঢাকা   সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

১,৬৮০ ব্যাংক শাখা এখন লোকসানে

অর্থ ও বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১১ আগস্ট ২০২৫

১,৬৮০ ব্যাংক শাখা এখন লোকসানে

 বাংলাদেশে লোকসানে থাকা ব্যাংক শাখার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮০টি শাখা লোকসানে ছিল, যা মোট শাখার প্রায় ১৫ শতাংশ। এর প্রধান কারণ হলো খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি এবং কিছু ব্যাংকে আমানতকারীদের ব্যাপক অর্থ উত্তোলন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাসে যেখানে ১ হাজার ২১২টি শাখা লোকসানে ছিল, মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮০টি। বর্তমানে মোট ১১ হাজার ২৪৭টি শাখার মধ্যে ১ হাজার ৬৮০টি লোকসানে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৪৩টি শাখা শহরে এবং ৫ হাজার ১৫টি শাখা গ্রামে অবস্থিত।


লোকসানি শাখার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পুরো ব্যাংক খাতের মুনাফাতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ২০২৪ সালের জুন মাসে যেখানে ব্যাংক খাতের মোট নিট মুনাফা ছিল ৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫ সালের মার্চে তা কমে ২ হাজার ৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে তা ছিল ১.৮২ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের মার্চে ৪.২০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে আগের সরকার কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে রেখেছিল। আসল তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার গ্রাহকরা দ্রুত আমানত তুলে নিতে শুরু করলে শাখাগুলো তারল্য সংকটে পড়ে। এই দুটি কারণে অনেক শাখা আর্থিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।


বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের লোকসানি শাখার সংখ্যা ২০২৪ সালের জুনের ৭৫৮টি থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের মার্চে ১ হাজার ২৪৯টি হয়েছে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেও লোকসানি শাখার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুনে যেখানে ১১০টি শাখা লোকসানে ছিল, ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে ২৩৭টি হয়েছে। আমানত সংগ্রহে দুর্বলতা, ঋণ আদায়ে কম দক্ষতা এবং কাঠামোগত অদক্ষতা তাদের মুনাফাকে প্রভাবিত করছে।

বর্তমানে গ্রাহকরা শাখা এড়িয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং মোবাইল আর্থিক পরিষেবা ব্যবহার করতে বেশি আগ্রহী। এতে শাখাগুলোতে গ্রাহকদের আসা-যাওয়া কমে যাওয়ায় তাদের রাজস্ব প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে।

ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ব্যাংকগুলো যদি তাদের কার্যক্রম পুনর্গঠন না করে, ঋণ আদায় ব্যবস্থা উন্নত না করে এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকে না এগোয়, তাহলে লোকসানি শাখার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।