
স্বল্প উচ্চতার আকাশপথে বিপ্লব, লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি ডলারের বাজার
স্বল্প উচ্চতার আকাশে ড্রোন ও উড়ুক্কু গাড়ির দাপটে বৈপ্লবিক এক ‘আকাশ অর্থনীতির’ দিকে এগোচ্ছে চীন। শহরের যানজট আর সীমিত স্থলপথের বিকল্প হিসেবে এখন চীনের নানা শহরে ডেলিভারি ড্রোন, কৃষিড্রোন, ফায়ারফাইটিং ড্রোন এমনকি যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত স্বচালিত উড়ন্ত গাড়ির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
চীনা সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই খাতে নীতিগত সহায়তা, লাইসেন্সিং এবং গবেষণায় বড় অগ্রগতি এসেছে। প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্নকে এখন বাস্তবতায় রূপ দিতে শুরু করেছে দেশটি।
২০২৫ সালের মধ্যে চীনের লো অল্টিটিউড ইকোনমি বা স্বল্প উচ্চতার আকাশ অর্থনীতির বাজার দাঁড়াবে ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে তা ৩ গুণ বেড়ে পৌঁছাতে পারে সাড়ে তিন লাখ কোটি ইউয়ানে—এমনটাই আশা করছে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
প্রযুক্তি খাতে বড় খেলোয়াড়রা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। খাদ্য সরবরাহ কোম্পানি Meituan এক বছরেই ড্রোনে দুই লাখের বেশি ডেলিভারি দিয়েছে। উড়ুক্কু গাড়ি নির্মাতা EHang-এর শেয়ারদরও গত দুই বছরে বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
চীনের ২০২৪ সালের শেষে বেসরকারি খাতে ব্যবহৃত ড্রোনের সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়িয়েছে। শুধু গত এক বছরে খাবার বাদ দিয়ে ২৭ লাখ পণ্য ড্রোনে সরবরাহ করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে জরুরি রক্ত পরিবহন, কৃষিজমিতে কীটনাশক ছিটানো, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ, এমনকি উঁচু ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণেও ব্যবহার হচ্ছে এসব আকাশযান।
২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং “লো অল্টিটিউড ইকোনমি”-কে ভবিষ্যতের অন্যতম প্রবৃদ্ধির খাত হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপরই শুরু হয় এই শিল্পের গতি বৃদ্ধির নানা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি কোর্স, আর অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থাকা অনেক জেলা প্রশাসন এখন এ খাতেই সম্ভাবনার আলো দেখছে।
যদিও চীনের আকাশপথ দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে এখন সরকার ৬০০ মিটারের নিচে সীমিত আকাশপথ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়েছে। শেনজেন, হেফেইসহ ছয়টি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে এই সুবিধা চালু হয়েছে।
বিশ্বের অন্য দেশগুলো যেখানে এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, সেখানে চীন এখন প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগে এক ধাপ এগিয়ে। “ড্রোন ও উড়ুক্কু যান কল্পনা নয়, নতুন বাস্তবতা”—এই নীতিতেই এগোচ্ছে চীনের নতুন আকাশযাত্রা।