ঢাকা   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:২১, ১৫ জুন ২০২৫

খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রীতিমতো উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ—অর্থাৎ, প্রতি চার টাকার এক টাকাই খেলাপি। তিন মাস আগেও (ডিসেম্বর ২০২৪) এই পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ফলে এই অল্প সময়েই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক অনিয়মে দেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অনিয়মিত ঋণও বেড়েছে। এসব ঋণের অনেকগুলো এখন নামমাত্র নবায়নের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা হলেও প্রকৃত আদায় হচ্ছে না। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি হিসাব চিহ্নিত করতে বাধ্য হচ্ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বর্তমানে তা ১৮ গুণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটির ঘর ছাড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এই ধারা গত কয়েক বছর ধরে চললেও গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর থেকে চিত্রটি আরও প্রকট হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫.৭৯ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪২.৮৩ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও ঋণখেলাপির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.১৬ শতাংশ—তিন মাস আগেও এটি ছিল ১৫.৬০ শতাংশ।

নানা সুবিধা দিয়ে একসময় যেসব বড় গ্রুপকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন খেলাপি তালিকায়। এর মধ্যে রয়েছে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, এমনকি ইসলামী ধারার পাঁচ ব্যাংকও, যেগুলোর একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান। ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অতীত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে অর্থ বেরিয়ে গেছে, তা শুধু খেলাপি বাড়ায়নি—সঙ্গে নিয়েছে জনগণের আস্থা, বিনিয়োগকারীর সাহস ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশের পাশাপাশি এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।