
ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘপথে জ্বালানি পুনরায় ভরার প্রয়োজন ছাড়াই হামলা চালানোর লক্ষ্যে ইসরায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে গোপনে বড় পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, গত শুক্রবারের অভিযানে অংশ নেওয়া এসব যুদ্ধবিমান আকাশে জ্বালানি নেয়নি বা আশপাশের কোনো দেশে অবতরণ করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানকে বাড়তি জ্বালানি বহনের উপযোগী করতে তার কাঠামো সংশোধন করা হয়েছে, তবুও এর স্টেলথ বা রাডার ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এই নতুন সংস্করণ পরিচিত ‘এফ–৩৫ আই আদি’ নামে। যুদ্ধবিমানে বাহ্যিক ড্রপ ট্যাংক যুক্ত করা হয়েছে, যা বাড়তি জ্বালানি বহনে সহায়ক হলেও প্রযুক্তিগতভাবে এটি ছিল অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল কাজ।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির ওপর নজর রাখা দেশগুলোর জন্য এটি বড় বার্তা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এই পরিবর্তন এফ–৩৫-এর সক্ষমতায় ‘গেম চেঞ্জিং’ মাত্রা যোগ করেছে। রাডার ফাঁকি দেওয়া প্রযুক্তির সংবেদনশীলতা বজায় রেখে কীভাবে জ্বালানি ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, সে বিষয়ে কারিগরি বিশদ প্রকাশ করা হয়নি।
এই অভিযানের পর মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র যেমন চীন ও রাশিয়াও এফ–৩৫-এর নতুন সক্ষমতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েলের তৈরি ড্রপ ট্যাংক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার তথ্য ২০২১ সালে প্রকাশ পেয়েছিল।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্ব ৬২০ মাইল, যেখানে এফ–৩৫–এর তত্ত্বগত পাল্লা প্রায় ৭০০ মাইল। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফিরে আসার জন্য বাড়তি জ্বালানি প্রয়োজন হয়। এই সীমাবদ্ধতা দূর করতেই এমন রূপান্তর।
এদিকে আজারবাইজান আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তারা তাদের ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে হামলার অনুমতি দেয়নি। ফলে স্পষ্ট হয়েছে—এবারের অভিযানে ইসরায়েল পুরোপুরি নিজেদের যুদ্ধবিমান ও প্রযুক্তির উন্নয়নেই নির্ভর করেছে।
যুদ্ধবিমানের গঠন ও ব্যবহৃত রাডার ফাঁকি প্রযুক্তি অক্ষুণ্ণ রেখে এমন পরিবর্তন সম্ভব হওয়াকে ‘অসাধারণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মহাকাশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলাফিয়া। তিনি বলেন, শুধু ফিটিংসের নকশা নয়, বাইরের কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় করা হয়েছে।
এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের এই অভিযানে গোপন সক্ষমতা উন্মোচিত হওয়ায় এর কৌশলগত গুরুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।