
সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বহুবার মাদকসহ কালিগঞ্জের বন্দকাটি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লার গাজীকে ধরলেও বিট পুলিশ অফিসার এস আই রাজীব তাকে ধরেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ তার ছাত্রছায়ায় মাদকের সমাজ্য গড়ে তুলেছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লা গাজী।
শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লা গাজী প্রকাশ্য ইয়াবা- গাঁজা বিক্রি করে উপজেলা জুড়ে। তার সিন্ডিকেটে রয়েছে উপজেলা জুড়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ী। সিন্ডিকেট সদস্যরা ওবায়দুল্লাহ গাজীর থেকে ইয়াবা গাঁজা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। প্রকাশ্য ইয়াবা গাজা বিক্রির ফলে কিশোর-তরুণরা মাদকাসক্ত হয়ে ছিনতাই ডাকাতির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর-তরুণরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে গড়ে তুলেছে সক্রিয় কিশোর গাং, যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় রাতে চেতনা নাশক স্প্রে ব্যবহার করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে। বিগত কয়েক মাসে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ১০-১৫ টি বাড়ি চেতনানাশক স্পেং ব্যবহার করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিভিন্ন স্থানে পথসভা করে মানুষকে সচেতন করে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই সময় জামিনে মুক্তি পেয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকাশ্য হত্যার হুমকি দিলেন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লদ গাজী সিন্ডিকেট। এ বিষয় কালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এলাকাবাসী বলছে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট । শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছে স্থানীয় থানা পুলিশের বিট অফিসার এস আই রাজীব। এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজীর থেকে প্রতিমাসে বড় অংকের মাসহারা পান এস আই রাজীব। যার ফলে মাদক ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন না। এমন অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি দাবিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ করার সিধান্ত গ্রহণ করেছে এলাকাবাসী।
সম্প্রতি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের পদক্ষেপে কিছু দিন আগে বন্দকাটি বাগেরহাট মাঠে গাঁজা ইয়াবাসহ ওবায়দুল্লাহ গাজীর দুই সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী মোস্তাকিম ও মিঠুন সরকারকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে এলাকাবাসী। তারপর থেকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজীর সিন্ডিকেট সদস্যরা। মাদক ব্যবসায়ীরা ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি দিলেও নিরব ভূমিকায় আছে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ। এলাকাবাসী বলছে যেখানে ইউনিয়নের অভিভাবক মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় হত্যার হুমকি পান সেখানে আমরা সাধারণ জনগন নিরাপদ কোথায়।
উল্লেখ্য, ওবায়দুল্লাহ গাজী কালিগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে ১০-১২ টি মাদক মামলা চলমান রয়েছে। সেসহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা কক্সবাজার থেকে সরাসরি ইয়াবা এনে কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে সরবরাহ করে। ৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনী তাকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ধরে জেলে দেয়। জামিনে বের হয়ে আবার মাদক ব্যবসা চালিয়ে যায়। গত জুনের ২০ তারিখে সাতক্ষীরা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তার বাড়ি বন্দকাটিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক করে তাকে জেলে প্রেরণ করে। কিন্তু সে আবারও জামিন পেয়ে মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী বাধা দিলে তার সন্ত্রাশী বাহিনী দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে চলেছে ।
মাদকাসক্ত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী আকবার কবির জানান, প্রকাশ্য ইয়াবা গাজা বিক্রি হলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয় না, কখনো অভিযান পরিচালনা করেন না। ২৪ ঘন্টা গাঁজা ইয়াবা বিক্রি হয় আমরা কেউ প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাশী বাহিনী দিয়ে হুমকি দেয়। মাদকাসক্ত কিশোর গাং দিয়ে চুরি ডাকাতি করায়। আমরা এলাকায় সম্পূর্ণ অনিরাপদ। যেখানে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি দেয় সেখানে আমরা তো সাধারণ মানুষ। আমাদের তো হুমকি দিবে না মেরে ফেলবে। মাদক বিক্রি ডাকাতি কোন বিষয় স্থানীয় পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয় না। বিট অফিসার এস আই রাজীবের যোগসাজশে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীর। এস আই রাজীবকে শতবার বললেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান, দেখবেন বলে মিথ্যা আশ্বাস দেন।
সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এস আই বিজয় কুমার মজুমদার বলেন, গত ২০ জুন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজীকে আমাদের টিম বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ওবায়দুল্লাহ গাজী অনেক বড় মাদক ব্যবসায়ী স্থানীয় কালিগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকলে নির্মূল সম্ভব। আমরা ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে তো সবসময় অভিযান করে পেরে উঠবো না।
কালিগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয় টা গুরুত্ব দিতে হবে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কালিগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ সে প্রকাশ্য ইয়াবা গাজা বিক্রি করে। তার রয়েছে মাদক বিক্রির বাহিনী তারা খুবই হিংস্র। আমি ও আমার দলের নেতাকর্মীরা মাদক বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি, যার ফলে আমি ও আমার লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমি এ বিষয় থানায় অভিযোগ করার সিদ্ধন্ত নিয়েছি। কালিগঞ্জ থানা পুলিশের তেমন কোন ভূমিকা নেই, তাদের বললে তারা বলেন আপনারা মাদকসহ ধরে আমাদের খবর দেন। সাধারণ জনগণের তো কাজ না মাদকসহ ধরা। পুলিশের অবহেলায় এই মাদক সম্রাট ওবায়দুল্লাহ মাদকের সমাজ্য গড়ে তুলেছে কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করি মাদক সম্রাট ওবায়দুল্লাহকে আইনের আওতায় এনে এলাকা মাদকমুক্ত করা হোক।
এবিষয়ে কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর পুলিশের বিট অফিসার এস আই রাজীবের কাছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লা গাজীর সাথে যোগসাজশের বিষয় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছি মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার কিন্তু পাচ্ছি না। মাদক ব্যবসায়ী থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন । আরও বলেন মাদক ব্যবসায়ীকে কল লিস্ট দেখে তাকে ধরার বিষয়ে অভিযান চলছে। আমরা তার বাসায় অভিযান চালালে সে পালিয়ে যায়।