ঢাকা   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা পদ্মাপাড়ের মানুষ

গ্রামবাংলা

আজু শিকদার, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৫ জুলাই ২০২৫

নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা পদ্মাপাড়ের মানুষ

পদ্মা নদীর পানি বাড়ার ফলে হঠাৎ করে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে রাজবাড়ীতে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার কাওয়াজানি ও মুন্সি বাজার এলাকার শতশত বিঘা ফসলী জমি। শুধু ফসলী জমি নয়, ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পড়েছে বসতবাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবর স্থানসহ বহু স্থাপনা। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে জানানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।

সরেজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া ও মুন্সিপাড়া বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সেখানে একটু পরপর মাটির বড় বড় চাপ নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। আবার পাশেই পাট ও পটলের ক্ষেত চলে যাচ্ছে নদীতে। অনেকে কাচাপাট কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নের ৮৫ বছর বয়সী আব্দুল মালেক শেখ বলেন, সর্বনাশা পদ্মায় এর আগে চারবার গিলে খেয়েছে আমার বসতভিটা। অবশেষে কাওয়াজানি গ্রামে সরকারি রাস্তার পাশে কুড়েঘর তৈরি করে বসবাস করছি। মনে চাপা ক্ষোভ আর বসতবাড়ি হারানোর বেদনা নিয়ে সর্বনাশা পদ্মার পারেই তার এই বসে থাকা। শুধু মালেক শেখ নয়, একই অবস্থা হারুন মন্ডল, খলিলুর রহমান, হবিবুল্লাহসহ শত শত মানুষের।

এ সময় হারুন মন্ডল বলেন, প্রতি বছরই পদ্মায় ভাঙ্গে, ভাঙ্গনের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ ফেলে সারা বছর আর কোন খোজ থাকেনা। যদি শুকনো মৌসুমে কিছু বস্তা ফেলা যেতো তবে বর্ষায় এসে আর ভাঙ্গনে পড়তে হতো না। 
তিনি আরো বলেন, গত বছর আমার পাঁচ বিঘা ফসলী জমি গেছে নদীর পেটে। এ বছর শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার এই কয়দিনে বাকি তিন বিঘা নদীর পেটে। এখন বাকি আছে ভিটেটুকু তাও মনে হয় রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

খলিলুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এই ভাঙ্গন। এ কারণে নদীতে বিলীন হয়েছে পটল ক্ষেত ও পাট ক্ষেত। পাট কাটার উপযোগী না হলেও বাধ্য হয়ে কেটে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের এই ভাঙ্গনে শতশত বিঘা ফসলী জমি নদীতে বিলিন হয়েছে বলে দাবি তার।

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম রেজা বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনের কারণে দেবগ্রাম ইউনিয়নটি ছোট হয়ে এসেছে। যেভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে এখনই জোরালো পদক্ষেপ না নিলে হারাতে হবে শতশত বসতবাড়ি, মুন্সিপাড়া মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রীজ, কালভার্টসহ গ্রামীণ সড়ক।

ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে এসে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গনের সচিত্র দেখে দুই দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে জরুরি খাত থেকে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, প্রয়োজনে সেটি দিয়ে শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, হঠাৎ করে পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারণে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙ্গন কবলীত এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই শুরু হবে নদী শাসনের কাজ।